জাহালমের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রায় ‘যে কোনো দিন’

আসামি না হয়েও তিন বছর জেল খাটার ঘটনায় পাটকলকর্মী জাহালম ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না- সে প্রশ্নে হাই কোর্টের রায় জানা যাবে ‘যে কোনো দিন’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2020, 02:23 PM
Updated : 12 Feb 2020, 02:41 PM

ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।
 
আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুভাষ চন্দ্র দাস। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে জাকির হোসেন, ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে আসাদুজ্জামান শুনানি করেন। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
 
পরে খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বক্তব্য ছিল ব্যাংকের কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না, ভুল ছিল না। তথ্যগত ভুল হয়েছে ব্যাংকের কারণে। কাজেই জাহালম ক্ষতিপূরণ পেতে পারে না। এটা আমাদের মূল বক্তব্য। এখন জাহালম ক্ষতিপূরণ পাবেন কি পাবেন না, সে সিদ্ধান্ত দেবে আদালত।”

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সোনালী ব্যাংকের কাছে যত কাগজপত্র আছে এবং আদালতে যেসব কাগজপত্র এসেছে, কোনো কাগজপত্রেই জাহালম নামের কোনো ব্যক্তির নাম পরিচয় ছিল না।

“২০১৫ সালের মার্চ মাসে দুদক এই জাহালমের নামটা কোথা থেকে আবিস্কার করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে… অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় যে আবু সালেককে জাহালম বানিয়েছে, সেই আবু সালেকের বাবা, মা, গ্রামের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে।

“সুতরাং সোনালী ব্যাংকের সাথে এ মামলার সম্পর্ক হচ্ছে ডিউটি অব কেয়ার। জাহালম যেহেতু সোনালী ব্যাংকের কোনো ক্লায়েন্ট ছিল না, সোনালী ব্যাংক কোনো মামলায় জাহালমের নামও উল্লেখ করেনি, সুতরাং জাহালমের ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের কোনো ডিউটি অব কেয়ার নাই। জাহালমের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে সোনালী ব্যাংকের কোনো দায়-দয়িত্ব নাই।”

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

এ বিষয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সেটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে।

এরপর গতবছর ২৮ জানুয়ারি হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করে।

কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না-  তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে গতবছর ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।

পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক।

তবে হাই কোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।

দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্র (সিএস)সহ যাবতীয় নথি তলব করে হাই কোর্ট। দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে বিচারক বলে, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই।

জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন- তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টের এই বেঞ্চ। সে অনুযায়ী জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন।

কিন্তু দুদক এক মাসেও নথি দাখিল করতে না পারায় ২ মে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলে আদালত। পাশাপাশি আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চায় হাই কোর্ট।

ওইদিনই আদালত জানায়, ২ মে দুদক তাদের প্রতিবেদন দিলে তখনই হাই কোর্ট জাহালমের মুখ থেকে তার কথা শুনবে। এরপর দুদক গত ২১ এপ্রিল হাই কোর্টের ওই বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যায়।

দুদকের যুক্তি ছিল, হাই কোর্টে দুদকের মামলা শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ রয়েছে। যে বেঞ্চ রুল দিয়েছে, দুদকের মামলা শোনার এখতিয়ার সেই বেঞ্চের নেই। কিন্তু আপিল বিভাগ দুদকের ওই আবেদন খারিজ করে দেয়।