বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি: যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির ঘটনায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ দোষীদের বিরুদ্ধে সংবিধান ও আনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 11:18 AM
Updated : 15 Jan 2020, 11:18 AM

এ সংক্রান্ত জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম কে রহমান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলে সাইফুল ইসলাম।

রায়ের পর এমকে রহমান সাংবাদিকদের বলেন,যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃতির ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যারা দোষী প্রমাণিত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যপারে সংবিধানের ৪(ক) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বিধান রয়েছে।

“যেহেতু সংবিধানের ৪(ক)অনুচ্ছেদে জাতির জনকের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এটি সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে এই অংশের যদি কেউ ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করেন তাহলে অবশ্যই সে ব্যক্তি ৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। আমাদের এই ব্যাখ্যা আদালত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। আশা করি, পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়টি প্রতিফলিত হবে।”

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃতির অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন যশোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল।

আদালত প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই ২৯ জানুয়ারি যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনসহ তিন জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করে।

পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তেরও নির্দেশ দিয়ে এ ঘটনায় যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ কর্মকর্তাকে তলব করে হাই কোর্ট।

গত বছরের ৪ নভেম্বর তারা আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেও আদালত সেদিন বলে, অভিযোগের প্রমাণ হলে ছাড় দেওয়া হবে না।

সেদিন ভিসির আইনজীবী কে এম সাইফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃতির ঘটনা ঘটেনি। অন্য কেউ ডেস্ক ক্যালেন্ডারে ছবি বিকৃতির দায় চাপাতে চাচ্ছে।

রিট আবেদনকারী আনোয়ার হোসেন বিপুল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছবি বিকৃতির অভিযোগ এনেছেন দাবি এ আইনজীবী এ ঘটনাটিকে ভিত্তিহীন বলেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত করায় রিট আবেদনকারীকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পরামর্শে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করে কমিটি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতার ছবি এবং ২০১৯ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা হয়নি। এছাড়া ২০১৮ সালের ক্যালেন্ডারে জাতির পিতার ছবির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নাম লেখাও সমীচীন হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও  বলা হয়, ২০১৯ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডার পুনঃমুদ্রিত। আগের (প্রথম) প্রিন্ট করা কপিতে জাতির পিতার ছবি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিদ্র করে স্পাইরাল বাইন্ডিং করা হয়। এছাড়া জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি (ছবির মাথা কেটে) বিকৃত করা হয়, যা প্রথম মুদ্রিত ডেস্ক ক্যালেন্ডার থেকে স্পষ্টতই প্রমাণ পাওয়া যায়।

জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা করেননি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

“এক্ষেত্রে কোনোভাবেই তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাদের ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বর করা উচিত ছিল।”