শীতের সঙ্গে কুয়াশার চাদরে দেশ, সড়কে সতর্কতা

কুয়াশার চাদরে রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। সেই সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2019, 07:13 PM
Updated : 19 Dec 2019, 07:16 PM

উত্তরী হিমেল হাওয়ার দাপটে রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও রয়েছে শীতের তীব্রতা। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চূয়াডাঙ্গায় ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে শৈত্যপ্রবাহের বিস্তাব বাড়ছে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা আরও কমবে।

আরও অন্তত তিন দিন (রোববার পর্যন্ত) শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি চলতে পারে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

মেঘাচ্ছন্ন ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার আভাস তুলে ধরে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

হিমালয়ের কাছে জেলা পঞ্চগড়ে বৃহস্পতিবার কনকনে শীত উপেক্ষা করে মাঠে কাজে কৃষক।

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর হায়দার চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টি সীমা অনেকাংশে কমে আসছে। এর কারণে সামনের পথচারী ও বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

এ অবস্থায় বাস্ট্যান্ডে অবস্থানরত ও মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকদের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় ফগলাইট ব্যবহার ও গতিসীমা সীমিত রেখে বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রাজধানী জুড়ে বৃহস্পতিবার ছিল কনকনে শীত, সাথে ছিল কুয়াশা। বৃহস্পতিবার ভর দুপুরেও বুড়িগঙ্গা নদী ছিল কুয়াশার চাদরে ঢাকা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, ডিমলা, সাতক্ষীরায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বদলগাছী, রাজারহাট ও যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮-৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

কেরানীগঞ্জের তেলঘাট এলাকায় নদী পার হতে হবে খেয়া নৌকায়। তাই হিম বাতাস থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে শীতের পোশাক জড়িয়ে নিয়েছেন মা-বাবা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কম থাকলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। থার্মোমিটারের পারদ ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর পারদ ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরনিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরা হয়।

পৌষের শুরুতে কুয়াশার চাদর ও শৈত্য প্রবাহকে স্বাভাবিক বলছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

শীতে জবুথবু এই নারী শিশু সন্তানকে নিয়ে হেঁটে পার হচ্ছেন বাবুবাজর সেতু। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তিনি বলেন, উচ্চ চাপ বলয় ও উত্তর-পশ্চিমা শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ (জেড বায়ু) বেশি সক্রিয় থাকায় এবং কুয়াশা ও জলীয় বাষ্পে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় শীতও তীব্র অনুভূত হচ্ছে। এ সময় কুয়াশাস্তর নিচে নেমে আসায় মেঘলা আবহাওয়াও বিরাজ করছে।

“পৌষ মাসে এমন আবহাওয়া থাকেই, এটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। ডিসেম্বরের শেষভাগে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। সোমবার থেকে তাপমাত্রাও বাড়তে পারে।”

নীলফামারী জেলায় বৃহস্পতিবার তীব্র শীত থেকে রক্ষায় দলবেঁধে আগুন পোহায়।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে হিমেল হাওয়া বইছে ঘণ্টায় ৮-১২ কিলোমিটার বেগে।

ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম থাকায় শীতও বেশি অনূভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

শীত বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে কম্বলের চাহিদা, বৃহস্পতিবার কম্বল মাথায় বাবুবাজর সেতুর উপরে এক ব্যক্তি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শীত বাড়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় ভুগছে শিশুরা।

ফরিদপুরের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নিরঞ্জন কুমার বলেন, “অসুস্থ শিশুদের শীতের হাত থেকে রক্ষায় বাবা ও মায়েদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। তাদের গরম পানি খাওয়ানোর পাশাপাশি গরম জামা-কাপড় দিয়ে রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না।”

শীত বাড়তে থাকায় জমে উঠেছে শীতের পোশাক কেনাবেচা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিমন্ত্রী  এনামুর রহমান রংপুর বিভাগের আটটি জেলা পঞ্চগড়, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার প্রতিটিতে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার করে মোট ৪০ হাজার কম্বল এবং এক হাজার করে মোট আট হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দিয়েছেন।