বয়ে যাচ্ছে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ

জেঁকে বসেছে শীত; পৌষের চতুর্থ দিন ভর দুপুরেও শীতের তীব্রতা অনুভব করেছে রাজধানীবাসী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2019, 06:54 AM
Updated : 25 Dec 2019, 04:10 AM

আবহাওয়া অফিস বলছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বুধবার থেকে।

বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এটাই চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

থার্মোমিটারের পারদ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে রাজশাহী, ঈশ্বরদী, নওগাঁর বদলগাছী, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও যাশোরেও।    

হিমালয়ের কাছে জেলা পঞ্চগড়ে বৃহস্পতিবার কনকনে শীত উপেক্ষা করে মাঠে কাজে কৃষক।

ঢাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

অবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার আরও বাড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা আরও একটু কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কম থাকলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। থার্মোমিটারের পারদ ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর পারদ ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরা হয়।

এবার শীত নেমেছে যেন পঞ্জিকা ধরেই। অগ্রহায়ণের শেষ দিনে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমে যায় ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সঙ্গে ছিল গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। পৌষের শুরুতেই যে শীত জেঁকে বসবে, সেই পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।

বুধবার দুপুরের পর হঠাৎ করেই রাজধানীতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। শুরু হয় শীতল হাওয়া। সূর্য মুখ লুকায় কুয়াশার আড়ালে। বৃহস্পতিবারও সেই অবস্থা চলছে। ফলে কষ্টে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

নীলফামারী জেলায় বৃহস্পতিবার তীব্র শীত থেকে রক্ষায় দলবেঁধে আগুন পোহায়।

চুয়াডাঙ্গার নিচের বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন আমাদের জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, “শীতের কারণে বাজারে লোকজন কম আসছে। বেচাকেনা নেই।”

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শামীম কবির জানান, শীতজনিতে রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে রোগি বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় এ দুটি ওয়ার্ডে ৬০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক বলেন, “শীতে শিশুদের আলাদা যত্ন নিতে হবে। কোনোক্রমেই তাদের যাতে ঠাণ্ডা বেশি না লাগে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সকলকেই বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।”

শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভিড় বাড়ার খবর দিয়েছেন আমাদের ফরিদপুর প্রতিনিধিও। বৃহস্পতিবার সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নীলফামারী জেলায় বৃহস্পতিবার তীব্র শীতে হেড লাইট জ্বেলে চালাতে হয়েছে যানবাহন।

ফরিদপুর শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকতা মো. আক্কাস মণ্ডল জানান, প্রতিদিন গড়ে এই হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছে সাড়ে তিনশ থেকে চারশ রোগী। তাদের অধিকাংশই আসছেন শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।

ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে আসা কয়েকজন অভিভাবক জানান, ঠাণ্ডাজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় ভুগছে শিশুরা।

ফরিদপুরের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নিরঞ্জন কুমার বলেন, “অসুস্থ শিশুদের শীতের হাত থেকে রক্ষায় বাবা ও মায়েদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। তাদের গরম পানি খাওয়ানোর পাশা-পাশি গরম জামা-কাপড় দিয়ে রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না।”

আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, “আরও দুয়েকদিন রাতের তাপমাত্রা কমবে। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। ২১ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত শীতের প্রকোপ অনুভূত হবে বেশ। এরপর দিন ও রাতের তাপমাত্রা খানিকটা বাড়বে।”