পেট্রোল পাম্প মালিকরা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ধর্মঘটে যাবেন না

তেল বিক্রির কমিশন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলরত পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিকরা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ধর্মঘটের মতো কোনো কর্মসূচিতে যাবেন না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 02:07 PM
Updated : 15 Dec 2019, 02:07 PM

এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে গঠিত একটি কমিটি তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে।

বিদ্যুৎ ভবনে রোববার জ্বালানি তেল পরিবেশক ও ট্যাংক লরি মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), জ্বালানি মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রতিনিধিদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যেসব দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, তার অনেকগুলোর সঙ্গেই জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক নেই। তবুও সমস্যার সমাধানে ছোট একটি কমিটি করতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বিপিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিপিসি, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, ব্যবসায়ী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কমিটি থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে।

তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ পথের বর্ধিত ইজারা মূল্য বাতিলসহ ১৫ দফা দাবিতে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে ধর্মঘট শুরু করে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিকরা।

ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে বিপিসির সঙ্গে ধর্মঘটীদের বৈঠক থেকে ১৫ ডিসেম্বর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের দিন ঠিক করে সে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। পূর্ব নির্ধারিত ওই বৈঠকটি রোববার হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রতিমন্ত্রী পেট্রোল পাম্প মালিকদের আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানালে তার তা মেনে নেন।

মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধের দাবির বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটা খুবই জটিল বিষয়। এনিয়ে আমি কিছুই করতে পারব না। তবে লরিগুলোর সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে চাঁদাবাজি হওয়ার সুযোগ নেই।

পেট্রোল পাম্পে টয়লেট স্থাপনের জন্য মালিকদের নির্দেশ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “একটি পেট্রোল পাম্পে পর্যাপ্ত টয়লেট থাকবে না, এটা হতেই পারে না।

“এমনকি সেখানে ছোট আকারের রেস্টুরেন্টও থাকতে পারে। সরকার পেট্রোল পাম্পের নতুন নকশা তৈরি করছে। সেটা সবাইকে মানতে হবে।“

অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, জ্বালানি সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পেট্রোল পাম্প মলিক সমিতির একাংশের নেতা সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম, অপর অংশের নেতা নাজমুল হকসহ অন্তত অর্ধশত পেট্রোলপাম্প মালিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিকদের ১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়া,  জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা, ট্যাংক লরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট করা, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা নেওয়ার নিয়ম বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে ক্যালিব্রেশনের নিয়ম বাতিল, ট্যাংক লরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানি তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং বিভিন্ন জেলায় ট্যাংক লরি থেকে চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।