বালিশকাণ্ড: রূপপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ জন কারাগারে

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের তিন মামলায় পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ১৩ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2019, 02:12 PM
Updated : 12 Dec 2019, 02:12 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রূপপুর প্রকল্পের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল ছাড়া অপর আসামিরা হলেন- পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, মোহাম্মদ আবু সাঈদ, মো. জাহিদুল কবির, মো. শফিকুল ইসলাম ও মো. রওশন আলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ তাহাজ্জুদ হোসেন, আহমেদ সাজ্জাদ খান, সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক খান ও মো. আমিনুল ইসলাম এবং মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী আসিফ হোসেন ও সাজিদ কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী শাহাদত হোসেন।

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন আবাসন প্রকল্পের আসবাবসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ‘অস্বাভাবিক’ ব্যয়ের অভিযোগ ওঠার পর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। ওই ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটিও করা হয়।

সেখানে একটি বালিশের পেছনে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা ব্যয় দেখানোর খবর গণমাধ্যমে আসায় এটা ‘বালিশ দুর্নীতি’ হিসেবে পরিচয় পেয়েছে।

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘বালিশ কেলেঙ্কারির’ ঘটনায় চার মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার রূপপুর প্রকল্পের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলমসহ ১৩ জনকে দুদক কার্যালয় থেকে আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুদক। দুদকের পাবনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে এসব মামলা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তিনটি মামলায় ১৩ জনকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী উপ-পরিচালক মো. শাজাহান মিরাজ ও উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন।

অপরদিকে আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করেন গোলাম সারোয়ার মনিসহ কয়েকজন আইনজীবী। মনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ এন্ড সন্সের মালিক আসিফ হোসেন জাবেদের পক্ষে মূলত শুনানি করেন।

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘বালিশ কেলেঙ্কারির’ ঘটনায় চার মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার রূপপুর প্রকল্পের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলমসহ ১৩ জনকে দুদক কার্যালয় থেকে আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

তিনি বলেন, “মূল্যায়ন কমিটি যে সুনির্দিষ্ট কাজ দিয়েছিল তিনি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ওই কাজ পেয়েছিলেন এবং সঠিকভাবে করেছিলেন। মালামাল সঠিকভাবে সরবরাহ করেছিলেন। কাজ সম্পন্ন করে তিনি সরকারের তিনটি দপ্তর ঘুরে তা যথানিয়মে গ্রহণ করিয়েছিলেন।

“দুই বছর পর এখন বলা হচ্ছে, এই প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। আমি যে প্রকল্পে কাজ করেছি সেটি নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি, মামলাও হয়নি। পরের প্রকল্প নিয়ে মামলা হয়েছে। আমাকে দিয়ে যদি রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়, তবে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারত।” 

অপরদিকে দুদকের পক্ষে মীর আহমেদ আলী সালাম ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিন আবেদন নাকচ করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আর্জি জানান।

“গ্রেপ্তারকৃতরা অপরাধ করেছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এসব প্রকল্প হয়। এসব প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তারা অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। তাই তাদের জামিন আবেদন নাকচ করা হোক,” বলা হয় দুদকের পক্ষ থেকে।

শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।