বাড্ডার গণপিটুনিতে কারা, খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ

ছেলেধরার গুজব কারা ছড়াচ্ছে, আর বাড্ডার গণপিটুনিতে কারা জড়িত, তাদের ধরতে মাঠে নামার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2019, 01:21 PM
Updated : 21 July 2019, 05:56 PM

গত কয়েকদিনে কয়েকটি ঘটনার পর শনিবার ঢাকার বাড্ডার একটি বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তসলিমা বেগম রেনু (৪২) নামে এক নারী মারা যান।

বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলে ধরার যে অভিযোগ এনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার কোনো যথার্থতা নেই। পুরো অভিযোগটাই মিথ্যা এবং প্রপাগান্ডা।”

এই ঘটনায় তসলিমার পরিবার একটি মামলা করেছে। তার তদন্তও শুরু করে দিয়েছে বাড্ডা থানা পুলিশ।

পুলিশ ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই সোহরাব হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে। এরপরই আমরা গ্রেপ্তার অভিযানে নামব।”

তদন্তে শুধু এই ঘটনার আসামিদেরই নয়, যারা ছেলেধরার গুজব ছড়িয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে, বলেন এসআই সোহরাব।

পুলিশ সদর দপ্তর শনিবারই এক বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ার করে বলেছে, “গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শামিল এবং গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো ফৌজদারি অপরাধ।”

পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে সম্প্রতি ফেইসবুকে গুজব ছড়ানো হয়, যাতে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল সরকার। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

এরমধ্যে বৃহস্পতিবার নেত্রকোণা শহরে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশি করে ‘শিশুর মাথা’ পাওয়ার পর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। এই ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।

এর মধ্যেই শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে তসলিমাকে পিটিয়ে মারা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা রাজ্জাক জানান, মহাখালীর ওয়্যারলেস গেইটে সন্তান নিয়ে থাকতেন তসলিমা। সন্তানকে ভর্তির বিষয়ে খবর নিতে ওই স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। বছরের মাঝে ভর্তির খোঁজ খবর নিতে যাওয়ায় কয়েকজন অভিভাবকের সন্দেহ হয়।

“এই সন্দেহ থেকে তাকে নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার কাছে যান কয়েকজন অভিভাবক। সেখানে তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় বাইরে খবর ছড়িয়ে পড়ে ‘ছেলেধরা’ এক মহিলা ধরা পড়েছে। খবরটি মুহূর্তে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং বাজারসহ আশপাশ থেকে শতশত লোক ছুটে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে এবং মহিলাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে নিয়ে গণপিটুনি দেয়।”

পুলিশ খবর পেয়ে গিয়েও তাকে বাঁচাতে পারেনি বলে জানান রাজ্জাক।

“ঘটনা মুহূর্তে ঘটে গেছে, পুলিশ খবর পাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে গিয়ে দেখে সব শেষ।”

পুলিশ কর্মকর্তা রাজ্জাক বলেন, স্বামীর সঙ্গে দুই বছর আগে তালাক হওয়ার পর মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল তসলিমা। এজন্য এক চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাও চলছিল তার।

এদিকে রোববার ময়নাতদন্ত শেষে রেনুর মৃতদেহ তার গ্রামের বাড়ী লক্ষ্মীপুরে নেওয়া হয়েছে বলে তার বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

মামলাটি টিটোই করেছেন। এই হত্যা মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪/৫ শ জনকে আসামি করা হয়েছে।