মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সামছুল আলম রোববার দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে অভিযোগপত্রটি জমা দেন বলে কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা দামের এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মোট ১৯ জনকে আসামি করে গতবছর ২৪ জুলাই দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটির দায়িত্ব পায়।
প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, যে ১৯ জনকে মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে পাঁচজনের ক্ষেত্রে অপরাধে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি তদন্তে। এ কারণে তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
এছাড়া তদন্ত করতে গিয়ে নতুন নয় জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় আসামির তালিকায় তাদের নাম যোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া কোম্পানির সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. শরিফুল আলম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আবুল কাসেম প্রধানীয়া, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন বিভাগ) আবু তাহের মো. নুর-উজ-জামান চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (মেন্টেনেন্স অ্যান্ড অপারেশন) মো. আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা শাখা) সৈয়দ ইমান হাসান, উপ-ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (মেন্টেনেন্স অ্যান্ড অপারেশন) মো. মোর্শেদুজ্জামান, উপ-ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) মো. হাবিবুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) মো. জাহেদুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ্র নাথ বর্মন, মো. মনিরুজ্জামান, ব্যবস্থাপক (কোন হ্যান্ডেলিং ম্যানেজমেন্ট) মো. শোয়েবুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর ডিপার্টমেন্ট) এ কে এম খালেদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) অশোক কুমার হালদার ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মো. জোবায়ের আলীকেও অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।
অভিযোগ থেকে যে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, তারা হলেন- ব্যবস্থাপক (কোম্পানির প্ল্যানিং অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন বিভাগ) মো. মোশারফ হোসেন সরকার, ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স) জাহিদুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক (সেইফটি ম্যানেজমেন্ট) মো. একরামুল হক, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহা এবং সাবেক মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) মো. আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ওই কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা আত্মসাত করেন।
গত বছর জুলাইয়ে কয়লা সরবরাহ না পাওয়ায় বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কয়লা উধাওয়ের ঘটনাটি আলোচনায় আসে। সরকারের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দুজনকে বদলি করা হয়।
কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহম্মদ সে সময় দাবি করেন, চুরি নয়, ‘সিস্টেম লস’ এর কারণে মজুদ থেকে কয়লা কমেছে।
তবে গণমাধ্যমে এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কয়লা গায়েব হওয়ার বিষয়টি নিয়ে পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিলে মামলা করা হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে।