সারা হল ঢাকা সিটির ভোটের আনুষ্ঠানিকতা

অধিকাংশ দলের বর্জনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন শেষ হয়েছে নিরুত্তাপভাবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2019, 12:03 PM
Updated : 28 Feb 2019, 12:40 PM

উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটির ১৮টি করে মোট ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট হয়েছে বৃহস্পতিবার। পাশাপাশি ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে হয়েছে উপনির্বাচন।

সকাল ৮টায় যখন ভোট ‍শুরু হয়, পুরো ঢাকায় তখন বৃষ্টি চলছে,অধিকাংশ কেন্দ্র ছিল একেবারেই ফাঁকা।

ঘণ্টা দুই পর বৃষ্টি থামলেও ভোটারদের উপস্থিতি আর সেভাবে বাড়েনি। ফলে প্রচার পর্বের মত ভোটের দিনও ছিল না ভোটের আমেজ।

দুই সিটি মিলিয়ে ১ হাজার ৭০০ এর বেশি কেন্দ্রে হয়েছে এদিন; সব মিলিয়ে ভোটার ছিলেন ৪০ লাখের মত। তাদের ৫০ শতাংশ এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।

বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয়েছে গণণা। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল পাওয়ার পর উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম এবং দক্ষিণের রকিব উদ্দিন মণ্ডল চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করবেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা ও পরিবেশন কেন্দ্র। আর দক্ষিণের ১৮ ওয়ার্ডের ফলাফল ঘোষণা করা হবে মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে।

এ নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, ২০২০ সালের মে মাসে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। 

বিএনপি বর্জন করলেও এই ভোটে অংশ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে আনিসুল হকের মতই আরেক ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলামকে। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন ব্যান্ডতারকা শাফিন আহমেদ।

এই দুজন ছাড়াও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম), পিডিপির শাহীন খান (বাঘ) ও স্বতন্ত্র আব্দুর রহিম (টেবিল ঘড়ি) ছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে।

এছাড়া উত্তরের ১৮ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১১৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৫ জন প্রার্থী ছিলেন এবার।

আর দক্ষিণের ১৮ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১২৫ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট ২৪ জন প্রার্থী ছিলেন। ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোটের লাড়াইয়ে ছিলেন ৭ জন।

 

আলোচনায় ‘ভোটার উপস্থিতি’

বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম ছিল, সে কথা প্রার্থী, নির্বাচন কর্মকর্তা, এমনকি খোদ সিইসি কে এম নূরুল হুদার কথাতেও এসেছে।

তবে দিন শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, দুই সিটির কাউন্সিলর পদের ভোট মিলিয়ে ভোটের হার ৫০ শতাংশ হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

“ঢাকার উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন ও উত্তর-দক্ষিণে সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে সবমিলিয়ে- আমরা এটি ধারণা করছি। তবে এটি চূড়ান্ত নয়।”

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, উপ নির্বাচনে এমনিতেই ভোটার উপস্থিতি কম থাকে। তার ওপর কয়েকটি দলের বর্জন আর বৃষ্টির কারণে ভোটাররা সেভাবে আগ্রহী হননি। তবে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে ভালো।

চার বছর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। বিএনপিসমর্থিত প্রার্থী ভোট চলার মধ্যেই কারচুপির অভিযোগ তুলে সেই নির্বাচন বর্জন করেছিলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সকালে ভোট দেওয়ার পর বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের।

“আমি আগেই বলেছি, দুটি কারণে ভোটার উপস্থিতি কম থাকতে পারে। একটি হচ্ছে স্বল্প সময়ের জন্য এই নির্বাচন, এক বছর পরে আবার নির্বাচন হবে- সেজন্য কম হতে পারে। আর সব রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় ভোটাররা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না ভাবলে কম হতে পারে।”

উপনির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপি একটি বড় দল, তারা নির্বাচনে না এলে এটা হতেই পারে।

ভোটে না থাকলেও বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভোট নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কে হবেন তা ভোটের ‘আগের রাতেই’ নির্ধারিত হয়ে গেছে।

“ব্যালট বক্স স্টাফিং হয়ে গেছে গত রাতেই। নিঃসন্দেহে। আজকে শুধু ফলাফল ঘোষণা করবে।”

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের ভাষায় বড় দল না আসায় ঢাকার উপ-নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে ভোটারদেরও উৎসাহ থাকে না।

তার মতে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এই নির্বাচন ‘পূর্ণাঙ্গ’ নির্বাচনও নয়, কারণ নির্বাচিতরা পুরো পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন না।

দুপুরে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উৎসবমুখর পরিবেশে ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট চলছে। কোথাও কোনো অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। ভোটাররা নিশ্চিন্তে সুশৃংখলভাবে ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিচ্ছেন। সার্বিক পরিস্থিত সন্তোষজনক।”

 

২০১৫ সালের ভোট

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতে একদিনে ভোট হয়। সেদিন কেন্দ্র দখল ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়ে ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০৯৩টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। ভোটের হার ছিল ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

ঢাকা দক্ষিণে মোট ভোটার ছিলেন ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। ভোট পড়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

আর ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ ভোটারের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ।