চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রশিদ তালুকদার জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করা গেছে, সবগুলোই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় কয়েকটি ভবনে আগুন লাগার পর ১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় তা পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে মোট ৭০টি বডি ব্যাগ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানোর কথা জানানো হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ ৬৭টি লাশ পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান।
সংখ্যার গড়মিলের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক তারেক হাসান ভূইয়ার ভাষ্য, তাদের হিসাবে লাশ ৭০টি।
“তবে কয়েকটা ব্যাগে খণ্ড খণ্ড ডেডবডি ছিল। সম্পূর্ণ ডেডবডি হয়ত ৬৭টি হতে পারে। কয়েকটি লাশ এতটাই পুড়েছে যে চেনার উপায় নেই।”
আর ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, "আমাদের কাছে ফুল বডি এসেছে মোট ৬৭টি। তবে আলাদা ব্যাগে কিছু খণ্ডিত দেহাবশেষ আছে। সেগুলো এই মরদেহগুলোরই কি না তা আমরা পরীক্ষা করে দেখব। আপাতত সবগুলো ডেডবডির স্যাম্পল রেখে দিচ্ছি।"
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে জায়গা না হওয়ায় শনাক্ত না হওয়া কয়েকটি মরদেহ অন্যান্য মেডিকেলের হিমঘরে রাখা হচ্ছে। এসব মরদেহের ডিএনএ নমুনা রেখে দেওয়া হয়েছে।
“যারা এখনও স্বজনদের খুঁজছেন, তারা রোববার থেকে ডিএনএ নমুনা সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কাছে দেবেন। নমুনা হিসেবে রক্ত ও লালার স্যম্পল দিতে হবে। সংরক্ষণ করা কোনো মরদেহের সঙ্গে মিল পেলে লাশ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হবে।”
হাসপাতালে স্থাপিত ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্র থেকে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইমরুল হাসান জানান, মরদেহ সমাহিত করার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
এ পর্যন্ত নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে
কামাল হোসেন (৪৫), পিতা: নূর মোহাম্মদ, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী অসি উদ্দিন (২৩), পিতা: নাসির উদ্দিন, ধানমণ্ডি, ঢাকা মোশাররফ হোসেন (৪৩), পিতা: মো. মাহফুজুর রহমান, নোয়াখালী হাফেজ মো, কাউসার আহমেদ (২৬), পিতা: মো. খলিলুর রহমান, শ্রীপুর, হোমনা, কুমিল্লা আলী হোসেন (৬৫), পিতা: মৃত বুলু মিয়া, নাটেশ্বর, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী মো. ইয়াসিন (৩৩), পিতা: মৃত আবদুল আজিজ, ১৭ কেবি রোড, চকবাজার, ঢাকা শাহাদৎ হোসেন (৩০), পিতা: মৃত মোসলেম উদ্দিন, নারায়ণপুর, ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা আবু বকর সিদ্দিক (২০), মোহাম্মদপুর, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর জুম্মন (৫২), ৩২/৩২ ওয়াসা রোড, চকবাজার ঢাকা মজিবুর হওলাদার (৫০), সন্তোষপুর, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী হেলাল উদ্দিন (৩২), নাটেশ্বর, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী আশরাফুল হক (২০), পিতা: মৃত জামশেদ মিয়া, ফরহাদাবাদ, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইমতিয়াজ ইমরোজ রাসু (২২), পিতা: নজরুল ইসলাম, বেড়া, পাবনা মো. সিদ্দিক উল্লাহ (৪৫), নাটেশ্বর, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী মাসুদ রানা (৩৫), পিতা: সাহেব উল্লাহ, নাটেশ্বর, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী অপু রায়হান (৩১), ৪৬/২, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, চকবাজার, ঢাকা আরাফাত আলী (৩), পিতা: মৃত মোহাম্মদ আলী, ৪৬/২, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, চকবাজার, ঢাকা মোহাম্মদ আলী (২২), ৪৬/২, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, চকবাজার, ঢাকা মাহবুবুর রহমান রাজু (২৯), পিতা: সাহেব উল্লাহ, নাটেশ্বর, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী এনামুল হক কাজী (২৮), পিতা: মোতালেব কাজী, রামপুর, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী সিয়াম আরাফাত (১৯), পিতা: মো. ইসমাইল, ৪ নাজিমউদ্দিন রোড, বংশাল, ঢাকা ওমর ফারুক (৩০), পিতা: আবদুল করিম, মুন্সিকান্দি, নড়িয়া, শরীয়তপুর সোলায়মান (২৫), মধুপুর, টাঙ্গাইল |
চুড়িহাট্টার আগুনে দগ্ধ নয়জনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে।
ভর্তি থাকা সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, “১৮ জন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছে, যাদের মধ্যে নয়জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে, বাকি নয়জন ভর্তি আছে।
“আহতদের মধ্যে ছয়জনেরই শ্বাসনালীসহ শরীরের ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”