ঢাকা মেডিকেল মর্গে ৬৭টি অগ্নিদগ্ধ লাশ

পুরান ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে ৬৭টি লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

মাসুম বিল্লাহও গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2019, 05:13 AM
Updated : 21 Feb 2019, 11:30 AM

এই লাশগুলো এখন মেডিকেলের মর্গে রয়েছে; নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনরা ভিড় করে আছেন সেখানে।

ময়নাতদন্তের পর শনাক্তকরণের ভিত্তিতে লাশগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ।

বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশের কয়েকটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর সকাল নাগাদ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ৭০টি লাশ উদ্ধারের পর ব্যাগে ভরে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর কথা জানায়।

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা ৬৭টি লাশ গ্রহণ করেছি।”

সংখ্যার এই গড়মিলের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক তারেক হাসান ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের হিসাবে লাশ ৭০টি।

“তবে কয়েকটা ব্যাগে খণ্ড খণ্ড ডেডবডি ছিল। সম্পূর্ণ ডেডবডি হয়ত ৬৭টি হতে পারে।”

লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, “পুলিশের কাছ থেকে সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তে অর্ডার পেলে যেসব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব, সেগুলোর পোস্ট মর্টেম করব।”

কয়েকটি লাশ এতটাই পুড়েছে যে চেনার ‍উপায় নেই।

সেক্ষেত্রে কী হবে- জানতে চাইলে অধ্যাপক সোহেল বলেন, “যেসব লাশ শনাক্ত কতরা সম্ভব না, সেগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করবে, পরবর্তীতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলিয়ে হস্তান্তর করা হবে।”

সিআইডির ডিএনএ এনালিস্ট আশরাফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মরদেহগুলো যেন নির্বিঘ্নে তাদের স্বজনেরা শনাক্ত করতে পারেন, সেজন্য ডিএনএ স্যাম্পলসহ শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো যেমন রক্ত, দাঁত সংগ্রহ করে নিয়ে যাব।”

মর্গের সামনে আগা মাসিহ লেন থেকে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ওয়াজেদ তার ভাগিনার বন্ধুর মরদেহ শনাক্ত করতে অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ভাগিনা মাইনুল ইসলাম লাবিব গত রাতে পাঁচ বন্ধু মিলে চকবাজারে দুটি মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল। সেখানে লাবিব, রমিজ, সোহাগ একটি মোটর সাইকেলে ছিল, আরেক মোটর সাইকেলে ছিল আরাফাত ও রোহান।”

লাবিবের মাথার সামান্য অংশ পুড়লেও বেঁচে গেছেন জানিয়ে ওয়াজেদ বলেন, আরাফাতের মোটর সাইকেলটিতে আগুন ধরে আরাফাত ও রোহান দুজনই মারা গেছেন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বড় কাটরা মাদ্রাসার শিক্ষক ওমর ফারুকের মরদেহ নিতে আসা সহকর্মী আমির হোসেন বলেন, যেখানে আগুন লেগেছিল, ঠিক তার উল্টো দিকে মদিনা মেডিসিনের দোকানে পার্ট টাইম ডিউটি করতেন ওমর ফারুক।

ফারুকের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া বলে জানান আমির।

মর্গের বাইরে নিহত ও নিখোঁজদের পাঁচ শতাধিক স্বজন অপেক্ষা করে আছে। অনেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিতে চাইছেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক সোহেল বলেন, “সেটা পুলিশের সিদ্ধান্ত, আমাদের না।”

ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবারও লাশ হস্তান্তর সম্ভব কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে লাশগুলো আইডিন্টেফিকেশন সম্ভব, সেগুলো ময়নাতদন্তের পর আজকের মধ্যে হস্তান্তর করা সম্ভব।”

চকবাজার থানার পরিদর্শক মুরাদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মর্গে থাকা লাশগুলোর মধ্যে চারটি শিশুর, পাঁচটি নারীর, ৫৮টি পুরুষের।

“এদের মধ্যে ১৯ জনের পরিবার তাদের মরদেহ শনাক্ত করেছে। প্রতিটি মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”