বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র আনুশকা রায় সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষকরা আমাদের সব দাবি পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এখন ক্লাসে ফিরে যাব।
“আর যেগুলো আইনি বিষয়, সেগুলো আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।”
শুক্রবার থেকে পরীক্ষা ও ক্লাসে ফিরে যেতে সব শিক্ষার্থীকে আহ্বান জানান আনুশকা।
অরিত্রীর মৃত্যুর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত তৎপর হয়ে উঠলে তদন্ত কমিটি গঠন, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ও এমপিও বাতিল করা হয়েছে।
টানা তিন দিনের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে গভর্নিং বডির পদত্যাগ এবং অরিত্রীর মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার শর্ত দেয় আন্দোলনকারীরা।
এর মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার সাংবাদিকদের মাধ্যমে অরিত্রীর বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এরপরেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে কয়েকজন শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষকদের কয়েকজনকেও ছাত্রীদের সঙ্গে কাঁদতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তারা।
শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে করে এসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
ভিকারুন্নিসার শিক্ষার্থীদের ছয় দফা
>> অধ্যক্ষের পদত্যাগ এবং ৩০৫ ও ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধে অধ্যক্ষের শাস্তি নিশ্চিত করা।
>> প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে মানসিক স্বাস্থ্যের বিবেচনা করে আলাদা যত্ন নিতে হবে। কোনোভাবেই শারীরিক ও মানসিক চাপ ও অত্যাচার করা যাবে না।
>> কথায় কথায় বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া বন্ধ করে অন্যায় ডিটেনশন পলিসি বন্ধ করতে হবে।
>> বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং কর্মরত সবার মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মানসিক পরামর্শদাতা থাকতে হবে। শৃঙ্খলাভঙ্গকারী শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে।
>> গভর্নিং বডির সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।
>> অরিত্রীর মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য অধ্যক্ষ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা আসার পর শিক্ষক হাসনা হেনাকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে তার মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ করেন আরেক দল শিক্ষার্থী।
অরিত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগের মামলায় জামিন না মঞ্জুর করে ওই শিক্ষককে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভিকারুননিসার সব শাখার ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
পরে পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলমান বার্ষিক সমাপনীর দুই দিনের পরীক্ষার সময় নতুন করে নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছিলেন পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা।
নতুন সূচি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা শুক্রবার এবং ৫ তারিখের পরীক্ষা ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
আরও খবর