চাহিদা না কমলে মাদক নিয়ন্ত্রণ `হবে না’

শুধু সীমান্তে নজরদারি কড়া করলে মাদক নিয়ন্ত্রণ হবে না বলে অভিমত এসেছে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে, এজন্য জোর দেওয়া হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে মাদকের চাহিদা কমানোর উপর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2018, 12:16 PM
Updated : 4 Dec 2018, 12:16 PM

মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন  (ক্র্যাব) ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই অভিমত আসে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২৪ জন সদস্যকে টেকনাফে নিয়োগ করা হয়েছে। তারা সেখানে কাজ করছে। আমাদের বর্ডার হচ্ছে শত শত কিলোমিটার। ২৪ জন দিয়ে সম্ভব?

“ওদের (মাদক চোরাচালানি) তো শত শত বাহিনী। বর্ডারের একদিক দিয়ে বন্ধ হলে অন্য দিক দিয়ে ঢোকে। এখন দেখলাম যে টেকনাফ দিয়ে মাদক আসা বন্ধ হয়েছে, পরে শুনলাম যে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে। আবার শুনলাম কলাপাড়া এলাকা দিয়ে ঢুকছে।”

অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমানোর পদক্ষেপ নেওয়ার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে কিন্তু মাদক ঠেকানো যাবে না, যদি অভ্যন্তরীণ চাহিদা বন্ধ করতে না পারি।”

বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত ৭০ লাখ, এর মধ্যে ৫০ লাখের মতো ইয়াবায় আসক্ত বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

মাদক নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দাবি করে জামাল উদ্দীন বলেন, “মাদক বন্ধের বিষয়ে জাতির সাথে আমরা কমিটেড। আমি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি হিসেবে চেয়ার নিয়ে বসে থাকব আর মাদক ব্যবসায়ীরা বীরদর্পে ব্যবসা করে যাবে তা হবে না।”

মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

“এককভাবে তা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, এর বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সামগ্রিকভাবে যদি সবাই চায়, তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণ হতে বাধ্য হবে।”

গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে জামাল উদ্দীন বলেন, “আপনারা মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য দেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করব। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি।”

মাদক চোরাচালানিদের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো সদস্যর সম্পৃক্ততা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন জামাল উদ্দীন।

“মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের কোনো মানুষ সম্পৃক্ত থাকতে পারে। যদি কেউ কোনো নেগোসিয়েশন করে সেটা যদি আমাদের চোখে পড়ে, আমরা যদি জানতে পারি, তাকে আমরা অফিস থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”

মাদকাসক্তদের জন্য অধিদপ্তরের নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থার কথাও জানান জামাল উদ্দীন।

তিনি বলেন, “মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আমাদের নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিবেন। নিরাময় কেন্দ্রের শয্যা বাড়িয়ে ১০০ শয্যা করা হয়েছে। নারী মাদকাসক্তদের জন্যও ২৪টি শয্যা তৈরি হচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা, সহকারী পরিচালক খুরশিদ আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অরবিন্দু বিশ্বাস বক্তব্য দেন।

ক্র্যাবের সভাপতি আবু সালেহ আকন্দের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম বাদশার সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে মাদক নিয়ে প্রতিবেদন করার অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন সাংবাদিক মিজান মালিক, দীপু সারোয়ার, আসাদুজ্জামান, এস এম আজাদ, সাইফুল ইসলাম মন্টু, আব্দুল লতিফ রানা ও আমিনুল হক ভূইয়া।