সংক্রামক রোগের কথা গোপন রাখলে জেল-জরিমানা

সংক্রামক রোগের কথা গোপন রাখার পর এই রোগে আক্রান্ত কারো মাধ্যমে তার বিস্তার ঘটালে তাকে কারাভোগের পাশাপাশি জরিমানা গুণতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2018, 12:50 PM
Updated : 20 August 2018, 12:50 PM

এমন বিধান রেখে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।

সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটান বা ঘটতে সহায়তা করেন বা স্থানের সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি গোপন করেন তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।

“এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।”

পুরনো দুটি আইন দিয়ে সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে শফিউল বলেন, ওই আইনগুলো পুনর্বিন্যাস করে নতুন আইন করা হয়েছে।

২৩টি সংক্রামক রোগের নাম প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে আরও রোগের তালিকা প্রকাশ করতে পারবে।

“সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনেকগুলো দায়িত্ব দেওয়া আছে। সেটাকে মনিটর করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে ১৩ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটির প্রস্তাব করা হয়েছে।”

শফিউল জানান, সুস্থ্য কেউ যাতে আক্রান্ত না হন সেজন্য কারো সংক্রামক রোগ হলে সেই তথ্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিষয়ে আইনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

“কোনো এলাকায় সংক্রমণ দেখা দিলে ওটাকে ডিফাইন করে ব্লক করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। ওই এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।”

শফিউল বলেন, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সরকার বিশুদ্ধ বা ধ্বংস করতে পারবে। রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে সরকার দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে। সংক্রমিত স্থান বা স্থাপনা জীবাণুমক্ত বা বন্ধ করতেও ব্যবস্থা নিতে পারবে।

“যদি কোনো স্থাপনা জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব না হয় তবে তা সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনকে জানাতে হবে। সিভিল সার্জন সেটি ধ্বংস করার জন্য মালিককে নির্দেশ দিতে পারবেন। জীবাণুযুক্ত যানবাহন প্রয়োজনে জব্দ করতে পারবে সরকার “

শফিউল জানান, কেউ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে সন্দেহ হলে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী দাফন বা সৎকার করতে হবে।

এই আইনে উল্লিখিত বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে ও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানালে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

সংক্রমণ রোগ নিয়ে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে সর্বোচ্চ দুই মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডিত হবেন।

এই আইনের অধীনে অপরাধগুলো জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা চালানোর শাস্তি বাড়ছে

লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা চালালে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনের সংশোধনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনে লাইসেন্স ছাড়া ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে ব্লক প্রস্তুতের ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রয়োজন হবে না।

“লাইসেন্স ছাড়া কেউ ইটভাটা চালালে আগে শাস্তি ছিল এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। এখন এক বছরের কারাদণ্ড ঠিক রেখে জরিমানা পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।”

শফিউল বলেন, ইট তৈরিতে মাটির ব্যবহার কমাতে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ইটভাটায় উৎপাদিত ইটের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ ‘হলো ব্রিক’ বা ‘ব্লক’ প্রস্তুতের নির্দেশনা জারি করতে পারবে। আগে ৫০ শতাংশ হলো ব্রিক করার নির্দেশনা ছিল, এখন রেস্ট্রিকশনটা উঠিয়ে দেওয়া হল।

মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে ইট বা মাটির বিকল্প উপাদানের ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সংশোধিত আইন পাস হলে পাহাড় বা টিলার আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

“খাল, বিল, নদী, খাড়ি, হাওড়-বাওড়, চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা থেকে ইট প্রস্তুতের জন্য মাটি কাটলে আগের মতই দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। তবে জরিমানা দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হচ্ছে।”

শফিউল বলেন, গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার পর ইটের কাঁচামাল হিসেবে মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত ‘হলো ব্লক’ না করেলে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। আগে এই শাস্তি ছিল এক লাখ টাকা জরিমানা।

ইট তৈরিতে মানমাত্রার বেশি সালফার, অ্যাশ, মার্কারি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে আগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গত, সংশোধিত অইনে এক লাখ টাকা জরিামানার প্রস্তাব করা হয়েছে।