১১ সিটিতে কোরবানির জন্য ২৯৫৪ স্থান নির্ধারণ

যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতে দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার পশু কোরবানির জন্য দুই হাজার ৯৫৪টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2018, 12:03 PM
Updated : 19 August 2018, 09:54 AM

এই ১১ নগরে এবার ৯৪টি পশুর হাট বসছে।ঈদের সময় এসব সিটি করপোরেশনে সব মিলিয়ে সাত লাখ ৬৭ হাজার ৯৩৭টি পশু কোরবানি হতে পারে বলে সরকার ধারণা করছে।

নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাই ও দ্রুত বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের মুসলমানরা তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন আগামী ২২ অগাস্ট। এই ধর্মীয় উৎসবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ঈদের নামাজ পড়ে পশু কোরবানি দেওয়া হয়।

মন্ত্রী জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬০২টি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৩টি, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ২১০টি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৩১৪টি এবং খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় পশু কোরবানির জন্য ১৬৩টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া পশু কোরবানির জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১৩৫টি, সিলেট সিটি করপোরেশনে ৩৬টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ১৮৩টি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ১৯০টি, রংপুর সিটি করপোরেশনে ১১৭টি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৪৪৩টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পশু কোরবানির জন্য ‘যথেষ্ট সংখ্যক’ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে মন্তব্য করে মোশাররফ বলেন, “তারপরও কেউ যদি নির্দিষ্ট জায়গায় না আসে, আমরা অনুরোধ করব মেয়ররা যেন এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করেন।”

প্রতিবছর কোরবানির সময় রাজধানীর অলিতে গলিতে যাত্রতত্র পশু জবাই করায় রক্ত ও পশুবর্জ্য ছড়িয়ে থাকে পুরো শহরময়। সেই বর্জ্য পরিষ্কার করাও সিটি করপোরেশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে রাজধানীতে পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়া করার জন্য স্থান নির্ধারণ করে দিয়ে এলেও সেখানে যাওয়ার আগ্রহ তেমন দেখা যায় না।

এর মধ্যে ২০১৬ সালে কোরবানির ঈদের দিন বৃষ্টি হলে শান্তিনগর এলাকায় পানি জমে যায়। জবাই করা পশুর রক্ত মেশা সেই পানির ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।   

অবশ্য সরকার নির্দিষ্ট জায়গায় পশু জবাইয়ের বিষয়টিকে এখনও বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনার কথা ভাবছে না।  

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, “খোলা স্থানে কোরবানি এনকারেজ করি না। আমাদের এমন কোনো আইনও নেই, খোলা জায়গায় (কোরবানি) করলে শাস্তির বিধান-টিধান কিছু নাই।”

নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইয়ের বিষয়ে প্রচার চালাতে সিটি করপোরেশনগুলোকে পাড়ায় পাড়ায় লোক নিয়োগের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি তদারকি করতে হবে।

কোরবানির বর্জ্য যেন নাগরিকদের অস্বস্তির কারণ হতে না পারে- সে বিষয়ে খেলার রাখার পরামর্শ দিয়ে মোশাররফ বলেন, “নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করানোর বিষয়টি অভ্যাসে পরিণত করা গেলে পরে আমাদের কোনো কষ্ট হবে না।”

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “কেউ যাতে না বলতে পারে কোরিবানি সামনে রেখে যথার্থ্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি কিংবা ঠিকভাবে কোরবানি করার সুযোগ-সুবিধা করে দেয়নি।”

নির্দিষ্ট জায়গায় পশু জবাই করলে সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সিটি করপোরেশনের জন্য সহজ হয়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনেকে হয়ত নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে নিজেদের আঙ্গিনায় কোরবানি করেন। সেটা করে যদি তারা পরিষ্কার করেন, তাহলে কোনো প্রশ্ন আসে না।”

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন গত তিন বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বরেন, কোরবানির ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার পর যে পরিমাণে সাড়া পাওয়ার আশা করা হয়েছিল, তা পাওয়া যায়নি।

“সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিষয় প্রত্যক্ষ করেছি, তারা নিজের বাড়িতে, বাড়ির আঙ্গিনায় কোরবানি করতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, এটার সাথে আমাদের সংস্কৃতিও রয়েছে, কোরবানি উৎসবের মত, আনন্দের মত একটি বিষয়।”

খোকন বলেন, “এটা (কোরবানি) যাতে সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করা যায়… প্রস্তুতি নিয়েছি ঘোষিত সময়ের মধ্যে মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করে শহরকে পরিচ্ছন্ন করব।… বিনামূল্যে ব্লিচিং পাউডার নাগরিকদের বাসায় পৌঁছে দেব, পশুর বর্জ্য ফেলার জন্য ব্যাগও সরবরাহ করা হবে।”

মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব জাফর আহমেদ খান এবং অন্য সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।