বাল্যবিয়ে বন্ধে ‘জোট বাঁধতে হবে’

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে বাল্যবিয়ের প্রবণতা কার্যকরভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মতামত এসেছে একটি মতবিনিময় সভা থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2018, 04:52 AM
Updated : 17 July 2018, 04:52 AM

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘তারুণ্যের শক্তি: আমরাই পারি বাল্যবিবাহ রুখে দিতে’ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির প্রধান হাবিবুর রহমান বলেন, বাল্যবিয়েমুক্ত দেশ গড়তে হলে সবাইকে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

“বাল্যবিয়ে এখন মানবাধিকার লঙ্ঘনও বটে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি-বেসরকারি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজসহ সবাই এক প্ল্যাটফর্মে কাজ করলে বাল্যবিয়ে বন্ধে কার্যকর ফলাফল আসে। সচেতনতাসহ বিভিন্ন কারণে তখন যুবকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্কিং তৈরি হয়।”

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।

“আমাদের তরুণদের ক্যাপাসিটি ডেভেলপ করতে হবে, কৌশলী হতে শিখাতে হবে। সেক্সুয়াল রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। বিবাহিত মেয়েরা যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে অনুযায়ী, রংপুর বিভাগে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ের হার ৭৬ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে এই হার ৭০ শতাংশ।

এই প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘গার্লস নট ব্রাইডস বাংলাদেশ জোট’ এর পক্ষ থেকে দুই জেলায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

মূলত প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে মেয়েদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা হয় এই প্রকল্পে। ব্র্যাকসহ জোটের সদস্য এনজিও ও সংগঠনগুলো এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশ নেয়।

রংপুরের মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, পিরগাছা ও কাউনিয়া এবং বরিশালের আগৈলঝরা, মুলাদি, হিজলা, বাকেরগঞ্জ ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় চলমান এই প্রকল্প শেষ হবে ২০১৮ সালের ২৪শে জুলাই। প্রকল্পের শেষ সময়ে এর কার্যকারিতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই সোমবার এই সভার আয়োজন করা হয়।

গার্লস নট ব্রাইডস এর সমন্বয়ক ও ব্র্যাকের পরিচালক আন্না মিনজ অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা এ প্রকল্প পরিচালনার সময় দেখেছি, কোনো এলাকায় অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি বা সুশীল সমাজ যাদেরই সাক্ষাৎকার নেই না কেন, তারা দাবি করেন নিজেদের এলাকায় বাল্য বিয়ে হয় না, বরং তাদের এলাকা থেকে পালিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েরা অন্য এলাকায় বিয়ে করে।”

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন তিনি। এগুলো হল- সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেয়েদের মতামতকে কম গুরুত্ব দেওয়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথ্যপ্রাপ্তির সীমিত সুযোগ, স্থানীয় উন্নয়নে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম থাকা, পারিবারিক ও সামাজিক বাধা এবং মেয়েদের ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের কথা অভিভাবকগণের বিবেচনায় না আনার প্রবণতা।

এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারলে বাল্যবিয়ে কমে আসবে বলে মত দেন আন্না মিনজ।

ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির সমন্বয়কারী নিশাত সুলতানার সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির ব্যবস্থাপক দিলরুবা নাসরীন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক কাজী আরিফুল হক বক্তব্য দেন।