মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিতে নিহত ৫

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে চার জেলায় আরও পাঁচজন গুলিতে নিহত হয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2018, 03:41 AM
Updated : 11 July 2018, 04:55 AM

এর মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কুষ্টিয়ায় দুইজন এবং নাটোরে একজনের প্রাণ গেছে। আর ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘গোলাগুলির মধ্যে’ নিহত হয়েছেন দুইজন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে মামলাও রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মে মাসে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর প্রায় প্রতি রাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘মাদক বিক্রেতাদের’ নিহত হওয়ার খবর দিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ ধরনের ঘটনায় গত দুই মাসে প্রায় দুইশ মানুষের মৃত্য হয়েছে।

আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার মিরপুরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুইজন নিহত হয়েছেন।

বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মিরপুর উপজেলার কূর্শা ইউনিয়নের আনান্দ বাজার বালুচর সংলগ্ন  জোয়াদ্দারের ইটভাটার কাছে গোলাগুলির ওই  ঘটনা ঘটে বলে র‌্যাবের  কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মোহাইমিনুলের ভাষ্য।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার রাজারহাট মোড় এলাকার আহম্মদ আলীর ছেলে ফুটু ওরফে মোন্না (৩৫) এবং একই এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে রাসেল আহম্মেদ (৩০)। তারা দুজনেই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছে র‌্যাব।  

র‌্যাব কর্মকর্তা মোহাইমিনুল বলেন, চোরাকারবারিরা ‘মাদক কেনাবেচার জন্য’ জোয়াদ্দারের ইটভাটার কাছে অবস্থান করছে খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল সেখানে অভিযানে যায়।

“র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে।  এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির  এক পর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কয়েকজন পালিয়ে গেলে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুইজনকে পাওয়া যায় “

ওই দুইজনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান মোহাইমিনুল।

তিনি বলছেন, এই অভিযানে দুই র‌্যাব সদস্যও আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ১২ রাউন্ড গুলি ও ‘বিপুল পরিমাণ’ ইয়াবা ও ফেন্সিডিল  উদ্ধার করা হয়েছে। 

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এক পলাতক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের মাদক উদ্ধার অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু হয়েছে।  

নিহত মো. সোহেল রানা ওরফে সুরাইয়া সোহেল দেনায়েতপুর গ্রামের আবদুল মুনাফের ছেলে ।

তার বিরুদ্ধে রায়পুর ও চাঁদপুরের হাইমচরসহ বিভিন্ন থানায় মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২২টি মামলা রয়েছে বলে রায়পুর থানার ওসি আজিজুর রহমানের ভাষ্য।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার বিকালে লক্ষ্মীপুরের ঝুমুর সিনেমা হল এলাকা থেকে পলাতক আসামি সোহেল রানাকে তারা গ্রেপ্তার করেন । পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে রাত ৩টার দিকে রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের সিংয়ের পুল এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ঘরে ইয়াবা উদ্ধারে অভিযানে যায় পুলিশ।

ওসি বলেন, “সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা সোহেলের সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ে । ওই সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এর মধ্যে সোহেল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হন।” 

আহত সোহেলকে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সদর হাসপাতালে পাঠান। সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ওসি।

তিনি বলছেন, এই অভিযানে থানার এস আই মোতাহার ও এস আই গোলাম মোস্তফাও আহত হয়েছেন । তাদের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ।

ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, তিন রাউন্ড গুলি ও ৩০০ ইয়াবা উদ্ধার করার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।

নাটোর

নাটোরের বড়াইগ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে মাদক আইনের পাঁচটি মামলা রয়েছে থানায়।

র‌্যাব-৫, সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা বলছেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বাহিমালি এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে।

নিহত ওসমান গণি (২৮) বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের গুরুমশৈল গ্রামের মনছুর আলীর ছেলে।

র‌্যাব কর্মকর্তা শিবলী বলেন, বাহিমালী এলাকায় একদল লোককে ‘ঘুরাঘুরি করতে দেখে’ তাদের টহল দলের সন্দেহ হয়।

“তাদের চ্যালেঞ্জ করা হলে তারা র‌্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে তারা পালিয়ে যায়। পরে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওসমান গণিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।”

ওসমানকে বড়াইগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান মেজর শিবলী।

তিনি বলছেন, এ অভিযানে র‌্যাবে দায়িত্বরত এএসআই মনজুর আহমেদ ও কনস্টেবল এনামুল হক আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ‘বিপুল পরিমাণ’ মাদক, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জে গ্রেপ্তার অপহরণ, হত্যা ও মাদক মামলার এক আসামি ঢাকার কেরানীগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের মাদক উদ্ধার অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

কেরানীগঞ্জের দেওসুর এলাকার মনীর হাজির বালুর মাঠে মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহ জামানের ভাষ্য।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের বলছেন, নিহত নূর হোসেন নূরার (৩৫) বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৮টি মামলা রয়েছে। পুলিশের ‘শীর্ষ মাদক চোরাকারবারীর’ তালিকাতেও তার নাম ছিল।  

পরিদর্শক শাহ জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পলাতক নূরাকে মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাকে নিয়ে রাতে কেরানীগঞ্জের দেওসুরে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার অভিয়ানে যায় পুলিশের একটি দল।

“সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা সহযোগীরা নূরাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের দিকে গুলি করে। ‍পুলিশও তখন পাল্টা গুলি চালায়। এর মধ্যে নূরা গুলিবিদ্ধ হয়।”

নূরাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান পরিদর্শক শাহ জামান।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ানশুটার গান, একটি চাপাতি ও একটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।