তামাকের কুফলের বর্ণনা থাকবে পাঠ্যপুস্তকেও

তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো ২০২০ সালের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2018, 12:24 PM
Updated : 27 May 2018, 12:24 PM

রোববার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৮ প্রদান এবং বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন’ অনুষ্ঠানে তিনি এই আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে মাদকের ক্ষতিকারণ দিকগুলো দেওয়া আছে, এগুলো আমরা পড়াই। মাদক আর তামাক একটা অভ্যাস, এগুলো খুবই কাছাকাছি, যার ফলে মাদকের মধ্যেই তামাকটাকে রেখেছি। পড়ানোর সময় এ সবগুলো পড়ানো হয়।

“তবে তামাক শব্দটি এভাবে নেই। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি যে, এবারের বই তৈরি হয়ে গেছে, ছাপানো হচ্ছে, আমরা আগামী বছর থেকে পাঠ্যপুস্তকে তামাক বন্ধ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করব।”

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি ট্যোবাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মার যৌথ আয়োজনে এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার কো অর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার।

২০১৬ সালে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ঢাকার ১১০টি স্কুলের ১০০ মিটারের মধ্যে প্রাপ্ত ৬৬১টি দোকানের ৯০ শতাংশ (৫৯১টি) দোকানেই তামাকপণ্য বিক্রি হয়।

এ বিষয়ে মন্ত্রী নাহিদ বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে সিগারেটের দোকান, বিড়ি বা তামাকের দোকান ... আমরা সার্ভে করেনি, যেহেতু তথ্য পাওয়া গেল, এটা আমি নোট করেছি।

“আমরা চেষ্টা করব, যাতে বিদ্যালয়ের আশেপাশে তামাকের দোকান কেউ না বসাতে পারে, সেই উদ্যোগ নেব।”

তবে তামাকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার উপরই বেশি জোর দিচ্ছে নাহিদ।

সমাজে নেতৃস্থানীয়রা যারা রয়েছেন, মাদক ও তামাকের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

“শুধু উপদেশ দিলে হবে না, নিজে এসে অংশগ্রহণ করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এইসব ব্যক্তিরা দয়া করে ধূমপান থেকে সরে এসে এটি বন্ধ করবেন।”

তামাক ব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি আইনকে কঠোরভাবে প্রয়োগের কথাও বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তামাক চাষ বন্ধে কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

“যেসব জমিতে তামাক চাষ হয় সেখান থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে অন্য ফসল চাষের উপযোগী করে দিতে হবে। যারা বিড়ি বা সিগারেট কারখানায় কাজ করে তাদের বিকল্প কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।”

আলোচনায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আবদুল মালিক বলেন, “ইদানিং ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ তামাক ব্যবহার।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে হৃদরোগসহ বড় চারটি অসংক্রমক রোগের মূল কারণ ধূমপান। ধূমপান ত্যাগ করানো গেলে এসব অসংক্রমক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়ক মো. খায়রুল আলম শেখ, নাটাবের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) গ্রান্টস ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভুঁঞা, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আত্মার আহ্বায়ক ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক মর্তুজা হায়দার লিটন স্বাগত বক্তব্য দেন।

সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আত্মা’র সহ-আহ্বায়ক ও এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক নাদিরা কিরণ।

অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতায় চারজনকে অর্থ ও ক্রেস্ট পুরস্কার দেওয়া হয়।

যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা হলেন- আঞ্চলিক পর্যায়ে সিলেটের স্থানীয় ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ এর প্রধান প্রতিবেদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় পর্যায়ে ‘দি ফাইন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের’ বিশেষ সংবাদদাতা দৌলত আক্তার মালা ও ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবুল কাসেম এবং সেরা টিভি রিপোর্টে বেসরকারি এনটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এস এম আতিক। এছাড়া বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন বরিশালের স্থানীয় ‘দৈনিক কীর্তনখোলার’ প্রধান প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা জুয়েল।