উল্টোপথের বাসের শিকার দেলোয়ারের ‘পা কাটার কথা শুনে’ হার্ট অ্যাটাক

উল্টোপথে চলা বাসের চাপায় আহত ট্রাফিক পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন পা কেটে ফেলার কথা শুনে মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে এক পর্যায়ে তার হার্ট অ্যাটাক হয়। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2018, 03:23 PM
Updated : 23 April 2018, 05:23 AM

তবে বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে থাকা দেলোয়ারের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তারা জানিয়েছেন, দেলোয়ারের বাম পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কয়েকটি স্থানে ভেঙেছে। পা কাটা না পড়লেও তিনটি আঙুল হয়ত রাখা যাবে না।

গত ১৬ এপ্রিল ঢাকার পলাশীতে কর্মরত অবস্থায় নীলক্ষেত থেকে উল্টোপথে আসা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি বাস থামানোর সময় এটি দেলোয়ারের বাম পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে থাকা সহকর্মীরা দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখান থেকে এ্যাপোলো হাসপাতাল ঘুরে এখন তার ঠাঁই হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে। 

রোববার হাসপাতালের সিসিইউর সামনে দেখা মেলে দেলোয়ারের স্ত্রী শামীমা সৈয়দের; সঙ্গে এক বছরের সন্তান। শামীমা সারাদিনই থাকেন হাসপাতালে। তবে স্বামীকে এক নজর দেখার সুযোগ মেলে শুধু বিকালের দিকে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শামীমা বলেন, “দিনে একবার কিছু সময়ের জন্য দেখতে পারি। এখন চোখ খুলে তাকাতে পারে। ইশারায় মেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করে। গতকাল থেকে একটু ভালো আছে। এর আগে অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল হয়ে গিয়েছিল।"

দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামীমা জানান, জনপ্রশাসনের বাসটি উল্টোদিকে যাওয়ার সময় সেটিকে থামাতে গিয়েছিলেন দেলোয়ার। কিন্তু বাসটি না থেমে তার ওপর দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। দেলোয়ার প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে এক পাশে সরে যেতে পারলেও বাম পা চলে যায় চাকার নিচে। এতে তার পা থেঁতলে এবং হাড় ভেঙে যায়।

“সাথে সাথে পুলিশ ওনাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। (বাস) গায়ের ওপর দিয়েই যেত, কিন্তু উনি লাফ দিয়ে সরে গিয়েছিলেন। ঢাকা মেডিকেলে একটি অপারেশনের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এ্যাপোলো হসপিটালে। ওখানকার ডাক্তাররা বলেন, পায়ের নিচের অংশ কেটে ফেলতে হবে।

“এটি শুনে উনি প্রচণ্ড বিষন্ন ছিলেন। আমরাও চাচ্ছিলাম না পা’টা কেটে ফেলা হোক, সেজন্য ওনাকে বাংলাদেশ স্পাইন অ্যান্ড অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পা কাটা হবে এটি উনি মেনে নিতে পারছিলেন না। মেন্টালি আপসেট ছিলেন। পা কেটে ফেলার কথা শুনেই হার্ট অ্যাটাক করেন।”

বাংলাদেশ স্পাইন অ্যান্ড অর্থোপেডিক হাসপাতালেই ১৯ এপ্রিল বিকালে হঠাৎ করে তার বুকে ব্যথা শুরু হলে দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে নেওয়া হয়।

শামীমা বলেন, “এরপর ডাক্তাররা আমাদের জানায় উনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ফুসফুসে পানি চলে এসেছিল।”

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে দেলোয়ারের চিকিৎসার সব খরচ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শামীমা।

দেলোয়ারের চাকরির বিষয়ে তিনি বলেন, “চাকরিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”

দেলোয়ার হোসেনের চার মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ১৭ এবং ছোট মেয়ের এক বছর ১ মাস। থাকেন বসুন্ধরায়।

স্কয়ার হাসপাতালে দেলোয়ারের চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে থাকা ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক মাহবুব মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেলোয়ারের বাম পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত কয়েক জায়গায় ভেঙেছে।

“ওনাকে একটি লোকাল হাসপাতালে অপারেশনের জন্য নেওয়া হলে উনি ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করেন। হার্ট অ্যাটাকটা আমরা কনজারভেটিভলি ম্যানেজ করেছি। তার এখন পেইন নাই। ব্লাড প্রেসার মোটামুটি। লাংসে পানি ছিল। এখন সেটা নাই, শ্বাসকষ্টটাও নাই। ওনাকে দুটি হসপিটালে বলেছিল, হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হবে।

“আমরা এখানে অর্থোপেডিকের কনসালটেন্ট দেখিয়েছি। প্রতিদিন ড্রেসিং করাচ্ছি। উনি এখন ভালো আছে। সমস্যা হচ্ছে ওনার পায়ের তিনটা আঙুল হয়ত রাখা যাবে না।”

দেলোয়ারের চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ডও করা হয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক।

দুর্ঘটনার দিনই শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন এএসআই মো. আবুল হোসেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাসটির চালককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে শাহবাগ থানার এসআই মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।