সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের কারণে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী।
Published : 11 Apr 2018, 12:01 PM
বুধবার সকাল ১০টার পর থেকে তাদের এই বিক্ষোভে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের খবর আসছে ঢাকার বাইরে থেকেও।
সকাল ১০টার দিকে তাঁতীবাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে পুরান ঢাকার একটি অংশ- সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জ থেকে গুলিস্থানের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল ৯টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করতে চাইলে ছাত্রলীগ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে এসেছিলাম। কিন্তু সরকার লালিত ছাত্রলীগের ক্যাডারবাহিনী আমাদের উপর যে হামলা করেছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার- এই দাবি আশা করি সরকার মেনে নেবে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের জাহানারা সরকার নদী বলেন, “সরকার নারীদের অধিকারের কথা বলে কিন্তু নারী অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। ছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগের এই হামলা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
বেলা ১টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ তাঁতীবাজার মোড়ে এসে আন্দলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতার ঘোষণা দেন।
তরিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকমকে বলেন, “শুরু থেকেই আমরা এই যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম, জনদুর্ভোগের জন্য আমরা রাস্তায় আসিনি। তবে জামাত-শিবির যখন এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে, তখন আমরা মাঠে এসেছি এবং সফলতা নিয়ে ঘরে ফিরব।”
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থী সাইফ রসুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোটা ১০ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
“কোটা সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্যের অবসান চাচ্ছি, মেধাবীদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হোক। কোটা থাকবে তবে ৫৬ শতাংশ থাকাটা যুক্তিযুক্ত নয়।”
পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে গ্রীন রোডের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন এক পর্যায়ে। পরে সোয়া ২টার দিকে তারা রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়।
নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আজকের মত আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিল তারা চলে যাবে।”
আগামীকাল থেকে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মগবাজারে রাস্তার একপাশ আটকে দিয়েছেন একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দল বাংলামোটর, রূপসী বাংলা মোড় অবরোধ করলেও পরে সরে যাওয়ায় ফার্মগেইট থেকে শাহবাগের দিকে গাড়ি যেতে পারছে।
সকাল থেকেই রাজধানীর নতুন বাজার হয়ে প্রগতি সরণি আবরোধ করে রাখে নর্থ সাউথ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও এআইইউবির শিক্ষার্থীরা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলামিন হক অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ নিজ মুখ থেকে ঘোষণা না দেবেন, ততক্ষণ আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
নাবিস্কো মোড় অবরোধ করেছে আহসানউল্লাহ ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টায় মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে সমাবেত হয়ে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থী।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিত্য আহসান বারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যারা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আছি, তারা বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য পুরো বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং আমরা অনেক শিক্ষার্থীর সেমিস্টার ফাইনাল থাকার পরেও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।”
বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সবাইকে সাথে নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।