তাদের আন্দোলনের কারণে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রামপুরা থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউ এবং প্রগতি সরণিতে পাঁচ ঘণ্টা এবং ধানমণ্ডির সোবহানবাগ হয়ে মিরপুর রোডে তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এর প্রভাবে আশপাশের বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
বিকালে রাস্তা ছেড়ে ফিরে যাওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা বলে গেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা বুধবার আন্দোলন চালিয়ে গেলে তারাও আবার রাস্তায় নামবেন।
সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা রোববার শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে পুলিশ তাদের রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়। এরপর রাতভর ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলে।
সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানে থাকা আন্দোলনকারীরা ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সরকারকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
একই সময়ে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) শিক্ষার্থীরা ভাটারা থানার সামনে থেকে শুরু করে বাড্ডা-রামপুরাগামী সড়কে অবস্থান নেন। ফলে রামপুরা থেকে নতুন বাজার হয়ে কুড়িলের দিকে যাওয়া আসার পথও আটকে যায়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে বসুন্ধরায় নিজেদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। বেলা ১২টার দিকে তারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেইটে এসে সড়ক অবরোধ করেন।
পরে ইনডিপেন্ডেন্ট, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ও এআইইউবির শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দিলে প্রগতি সরণির দুই দিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নর্থ সাউথের এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তাজিন মাহমুদ আশিক তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে এবং সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ভাই-বোনদের সাথে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি।”
এদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরের পর সোবহানবাগে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে।
শুরুতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিলে মিরপুর রোডের এক পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান।
বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে রাস্তা থেকে সরে যান। তারপর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিন আহম্মেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আজকের মত আমরা সরে যাচ্ছি। তবে এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থাকবে।”
বুধবারও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বরেন, “এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড অব সিকিউরিটি মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) ইমরান বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে উঠে যেতে বললে আন্দোলনকারীরা তা মেনে নিয়ে রাস্তা থেকে উঠে যান। এরপর বাকি তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ধীরে ধীরে সড়ক ছেড়ে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।
এ এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলামিন হক অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি), ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম (আইআইইউসি), প্রাইম এশিয়া, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেস ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীরাও কোটা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।