‘নিরাপদ পৃথিবী’ গড়তে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রত্যাশা হাসিনার

ফ্রান্সের প্যারিসে ওয়ান প্লানেট সামিটে নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব প্যারিস থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2017, 05:30 PM
Updated : 12 Dec 2017, 05:31 PM

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে এই সম্মেলন হচ্ছে।

বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় মঙ্গলবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অংশ নিয়েছেন।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বিশ্ব নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এমন পর্যায়ে বেঁধে রাখার উদ্যোগে নেওয়া হবে, যাতে তা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উন্নত দেশগুলোর প্রতি আমি আহ্বান জানাতে চাই, জলবায়ু সঙ্কটে সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসের দায় মেটাতে তারা যেন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন। কেবল যৌথ প্রেচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা এই পৃথিবীকে নিরাপদ করতে পারি।

“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জলবায়ু প্রশ্নে আমাদের যৌথ অঙ্গীকার ও উদ্যোগ শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে, সাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”

প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় উদ্যোগ গ্রহণে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। গত সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের উদ্যোগে জাতিসংঘে ‘গ্লোবাল প্যাক্ট ফর দ্য এনভায়রনমেন্ট’ চালুর কথা উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ এ ভয়াবহ আপদের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রতিরোধ ও অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে আমাদের টেকসই উন্নয়ন কৌশলে এটিকে মূল ধারায় রাখা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিসি প্রাসাদে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ছবি: পিআইডি

এই সম্মেলন থেকে শেখ হাসিনা বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ২ শতাংশ বনাঞ্চল বৃদ্ধি করে বিদ্যমান ২২ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে উন্নীতে ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “দেশের মোট আয়তনের ২২ শতাংশ বনভূমিকে আগামী পাঁচ বছরে ২৪ শতাংশে নিয়ে যেতে সরকার প্রয়োজনীয় বনায়ন কর্মসূচি নেবে।”

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের জিডিপির এক শতাংশ ব্যয় হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের কৃষিকে আমরা জলবায়ু সহিষ্ণু করছি। আমরা শহরে পানি সরবরাহে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করছি।”

সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল সংখ্যক জনগণকে আশ্রয় দিতে গিয়ে দেশের উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু অভিযোজনের বিষয়টি ‘বিরাট’ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১০ লাখের বেশি নাগরিক আশ্রয় নেওয়ায় বাংলাদেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে কক্সবাজারে এক হাজার ৭৮৩ একর বনভূমিতে এসব বাস্তুচ্যুত মানুষকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। প্রলম্বিত এই উদ্বাস্তু সমস্যা ওই অঞ্চলে আমাদের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে সেখানে পরিবেশ সুরক্ষা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বনায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে বৃক্ষ রোপনে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।”

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন সংরক্ষণে পাঁচ কোটি সাড়ে ৭ লাখ ডলারের প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অংশীদার ছাড়াও নিজস্ব সম্পদ দিয়ে লক্ষ্য পূরণে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন,  “ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমি ক্ষয়, লবণাক্ততা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে আমরা উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করতে শুরু করেছি। এ অঞ্চলে প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর ভূমি বনায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।”

এর আগে ওয়ান প্লানেট সামিটে আসা নেতৃবৃন্দের সম্মানে এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সকালে এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।