শাকুর মজিদের জন্মদিনে এলো চার খণ্ডের ভ্রমণসমগ্র

স্থপতি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, আলোকচিত্রী-এসব পরিচয় ছাপিয়ে শাকুর মজিদের বড় পরিচয় তিনি একজন ভ্রমণ বিষয়ক লেখক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 06:28 PM
Updated : 22 Nov 2017, 06:28 PM

বুধবার এই লেখকের ৫২তম জন্মবার্ষিকীতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তার ভ্রমণ বিষয়ক বইগুলো সংকলিত করে প্রকাশনা সংস্থা কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে চার খণ্ডের ভ্রমণসমগ্র।

গুলশানে ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে রাতে জন্মদিনের আয়োজনে এই ভ্রমণসমগ্রের মোড়ক উন্মোচন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীন, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাসহ নাট্যাঙ্গন ও প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধাররা।

জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, “শাকুরের ভ্রমণকাহিনি পড়লে একটা ভ্রান্তি কেটে যাবে, তা হল বাঙালি হোম সিক। ভ্রমণের নেশায় শাকুর দেশে বিদেশে চষে বেড়িয়েছে। তার ভ্রমণ কাহিনি বড় দুরন্ত, যা বাঙালির ভ্রমণের একটা বিশাল ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তার লেখার মধ্যে সহজিয়া ভাব রয়েছে, যা তার জীবনাচরণেও প্রত্যক্ষ করি।”

সম্প্রতি মরমি সাধক হাসন রাজাকে নিয়ে শাকুর মজিদ একটি মঞ্চনাটক লিখেছেন জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, “শাকুর এক সময় টিভি নাটক লিখতেন, কিন্তু এখন তা বাদ দিয়ে পুরোপুরি মঞ্চে মনোনিবেশ করেছেন। আমরা তাকে মঞ্চে আরও বেশি করে পাব, এটা বড় পাওয়া।”

বাংলা সাহিত্যে সমকালীন ভ্রমণ বিষয়ক সাহিত্যিকদের মধ্যে শাকুর মজিদকেই সবচেয়ে ‘বেশি জনপ্রিয়’ মনে করেন কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের।

তিনি বলেন, “এই সময়ে শাকুরই সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ সাহিত্য লিখেছেন। তার সাহিত্য বড় চিত্তাকর্ষক। তার গল্পের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য হল, তিনি মানুষের চরিত্র নিয়ে খেলতে বড় ভালোবাসেন। তিনি তথ্যচিত্র, জীবনকাহিনী নির্মাণ করেন, আরও কত কিছু করেন। তার কাজ সত্যি ঈর্ষণীয়।”

অনুষ্ঠানে শাকুর মজিদ বলেন, “জন্মদিনের এই আয়োজনে কথাপ্রকাশ যে বইগুলো প্রকাশ করেছে, তাতে শুধু ভ্রমণকাহিনী নয়, আমি বিভিন্ন দেশের সময় ও মানুষকে তুলে আনতে চেয়েছি। ভ্রমণসমগ্র মূল্যায়নের ভার পাঠকের। আমি লিখতে ভালোবাসি, ভালোবাসি ঘুরে বেড়াতে। যেখানে যাই একটা স্টিল ক্যামেরা, আরেকটা ভিডিও ক্যামেরা সঙ্গে থাকেই। আমার লেখালেখি চলতেই থাকবে।”

তিনি জানান, তার ভ্রমণসমগ্রতে ১৯৯৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ‍তুরস্ক, আমেরিকা, চিলি, ইতালি ও স্কটল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা যাবে। এতে ‘আমেরিকা’, ‘কাছের মানুষ, ঘরের মানুষ’, ‘পাবলো নেরুদার দেশে’, ‘মিং রাজের দেশে’, ‘নাশিপড়া লিজিয়াং’, ‘মালয় থেকে সিংহপুরী’, ‘কালাপানির গল্প’, ‘সিংহল সমুদ্র থেকে’, ‘সুলতানের শহর’, ‘ফেরাউনের গ্রাম’সহ বিভিন্ন ভ্রমণ বিষয়ক বই সংকলিত হয়েছে।

চার খণ্ড বই একসঙ্গে কিনতে ৩৫০০ টাকা গুণতে হবে।

শাকুর মজিদের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর, সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা গ্রামে। পড়াশুনা করেছেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি লেখেন, ছবি তোলেন, নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র।

টেলিভিশনে নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন নয়টি, নিজে পরিচালনা করেছেন পাঁচটি। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে এ পর্যন্ত ২১টি পুরস্কার পেয়েছেন।

এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন শাকুর মজিদ। এসব ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে প্রামাণ্যরূপ দিতে ‘পৃথিবীর পথে পথে’, ‘ভুবন ভ্রমিয়া শেষে’, ‘ইতিহাসের শহর’, ‘দূরদেশ’, ‘দূরে কোথাও’, ‘মসজিদের ইতিকথা’, ‘আমাদের এই বসুন্ধরা’ প্রভৃতি শিরোনামে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রায় দেড়শটির মতো প্রামাণ্যচিত্র প্রচার হয়েছে, প্রকাশ হয়েছে বারোটি ভ্রমণকাহিনী।