‘ছয় মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ১১৮৫টি’

গত মার্চ থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ছয় মাসে বাংলাদেশে এক হাজার ১৮৫টি নারী নির্যাতনের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে বলে জানিয়েছেন একজন আইনজীবী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2017, 08:37 PM
Updated : 18 Nov 2017, 08:42 PM

শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নির্যাতনের শিকার নারীদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আইন সহায়তা নিশ্চিতকরণ’ শিরোনামের সংলাপে এ তথ্য জানান আইনজীবী তাপস কান্তি বল।

‘নারী নির্যাতনের সার্বিক চিত্র: ঘটনা অনুসন্ধান’ শিরোনামের প্রবন্ধে তিনি বলেন, ছয় মাসে (মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত) দেশের ছয়টি দৈনিক পত্রিকায় ৩১৯টি পৃথক ধর্ষষের খবর এসেছে। পাশাপাশি হত্যা ২৬০টি, শিশু নির্যাতন ১৬০টি, যৌন হয়রানি ৮৯টি, আত্মহত্যা ৯৮টি ও পারিবারিক নির্যাতনের ৭১টি খবর এসছে।

এছাড়া বাল্যবিয়ে, অপহরণ, গৃহকর্মী নির্যাতন, সালিশ ও ফতোয়া, এসিড সন্ত্রাস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন এ আইনজীবী।

ছয়টি দৈনিকের ছয় মাসের নারী নির্যাতন সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তাপস কান্তি বল বলেন, ৩১৯টি ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে মামলা হয়েছে ২১৬টি ঘটনায়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বিচার হয়েছে ১২টি ধর্ষণের ঘটনার। এমনিভাবে ২৬০টি হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১১৫টি। এর মধ্যে বিচার হয়েছে ২৩টি হত্যাকাণ্ডের।

বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সংলাপে অংশ নেন।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আসলে আমার কোনো ভূমিকা নেই। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এর সমাধান খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। রাষ্ট্র আইন করেছে, কাকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে সেটাও নির্ধারণ করে দিয়েছে।

“কিন্তু যে সমস্যাগুলো আলোচনা হয়েছে সে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সরকারকে সুপারিশ করতে হবে, কথা বলতে হবে। তবেই এর সমধান হতে পারে।”

তিনি বলেন, “ওয়ানস্টপ সার্ভিসের কথা এসেছে। এই ওয়ানস্টপ সেবার বাস্তবায়ন করতে হলে আইনেরও সংশোধন প্রয়োজন। যেটা সরকারকে করতে হবে। এ বিষয়টা সরকারের উপলব্ধিতে আনানো প্রয়োজন। সে জন্য জনমতের প্রয়োজন।”

জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘নারী নির্যাতন বন্ধে, প্রতিরোধে সরকারের তহবিল অছে। কিন্তু সরকারের সে প্রচেষ্টা, তহবিল যাদের সহায়তায় প্রয়োজন তাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না।”

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “যে কোনো ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধে, প্রতিরোধে সরকারের চেষ্টা আছে। কিন্তু এ চেষ্টাটা সরকার একলা করলে চলবে না, সফলও হবে না। যে যার অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকভাবে করতে হবে। চেষ্টার ভারটা আমাদের সবার কাঁধে নিতে হবে।”    

সভাপতির বক্তব্যে অধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “একটি শাস্তিমূলক সমাজ কিন্তু সুস্থ্ সমাজ হতে পারে না। ন্যায়বিচারের সমাজ দেখতে চাই। আমাদের সবার কাজের মধ্য দিয়ে একটি ন্যায়বিচার সম্পন্ন, মানবাধিকার বোধ সম্পন্ন সমাজ আমরা তৈরি করি, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনে তার পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে একটি নিঃশঙ্ক জীবন যাপন করতে পারে।”