৬৯ বছর বয়সী মাহবুবুর একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়া পাড়ার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। আসামি মাহবুবুর ও তার ভাই আব্দুল মান্নান রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে যুদ্ধাপরাধের ৫৪তম প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমম্বয়ক সানাউল হক।
হান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়।
“তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ ৭ জনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, মাহবুবুর রহমান একসময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন। তিনি নির্দলীয়ভাবে তিন তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।
গত বছরের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হলে গত নভেম্বরে মাহবুবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
মামলাটি তদন্ত করেছেন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান। দেড় বছরেরও বেশি সময়ের তদন্তে তার বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এই তদন্ত কর্মকর্তা জানান।
সানাউল বলেন, তদন্তকালে ৬০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এবং মোট ১০০ পাতার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলে চার ভলিউমে ৩৮০ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। শিগগিরই তা প্রসিকিউশনে জমা দেওয়া হবে।
মানবহিতৈষী কাজে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকায় ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রণদা প্রসাদ সাহাকে। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিসরূপ স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। তিনি আর পি সাহা নামেও সমধিক পরিচিত।
রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা; থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে।
ওই বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যান্যদের ধরে নিয়ে যায় আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।