রোহিঙ্গাদের নজরে রাখতে কুতুপালংয়ে ৫ পুলিশ ক্যাম্প

রোহিঙ্গা যুবকের হামলায় এক বাংলাদেশি নিহত হওয়ার পর কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে পাঁচটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2017, 09:49 AM
Updated : 29 Oct 2017, 11:30 AM

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে রোববার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পুলিশকে ক্যাম্প স্থাপনের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, “সেখানে আমরা এদের (রোহিঙ্গা) আরও তীক্ষ্ণ নজরে রাখার জন্য (কুতুপালংয়ে) পাঁচটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছি। তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করতে অনুরোধ করেছি।”

বনবিভাগের জমির দখল নিয়ে বিরোধের জেরে কক্সবাজারের রামুতে শনিবার এক রোহিঙ্গা যুবকের হামলায় খুনিয়াপালং ইউনিয়নের খেদারঘোনা এলাকার আব্দুল জব্বার (২৮) মারা যান।

ওই ঘটনায় পুলিশ জিয়াবুল হক নামে ২২ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা যুবক এবং তার ফুফু ভেওলা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে।

জিয়াবুল দেড় মাস আগে মিয়ানমার থেকে এসে খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের খেদারঘোনায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর তার ফুপু বাংলাদেশে এসেছেন কয়েক বছর আগে।

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, “স্থানীয় একজন মারা গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর। ঘটনার পরপরই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তদন্ত চলছে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এটা নিশ্চিত করতে পারি। আমি আগেই বলেছি- যেই হোক তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি পেতে হবে।”

রোহিঙ্গার হামলায় বাংলাদেশি নিহতের ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মায়া বলেন, “এসব জিনিস নজরে রেখেই আজকে আমারা গুরুত্ব দিয়েছি। তাদের এক জায়গায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই আলোকে তাদের কুতুপালংয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, “অত্যন্ত সুচারুভাবে তারা কাজ পরিচালনা করছেন। যেই হোক, তাকে কিন্তু আইনের আওতায় আমরা আনবই।”

মাত্র দুই মাস সময়ের মধ্যে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আসার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, “এই অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার অবিরাম পরিশ্রম করছে। ২৬টি চেকপোস্ট করেছে, যেন এরা ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে। তারপরেও দেখেন, ছিদ্র দিয়ে দুই-চারটা বেরিয়ে যায়। তাদেরকে ধরে আবার নিয়ে কুতুপালংয়ের স্থায়ী ক্যাম্পে রাখছি।”

রোহিঙ্গারা বিশাল এলাকাজুড়ে পাহাড়ে পাহাড়ে বস্তি গড়ে তোলায় সরকার কুতুপালং এলাকায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি এবং পাহাড় কাটার ক্ষতি কীভাবে পোষাবে- তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।

জবাবে মায়া বলেন, “এই লোকগুলি তো আসছে, থাকবে কোথায়? আপনি প্রশ্ন করার আগে একটু জিনিসটা চিন্তা করবেন। লোকদের ঠাঁই তো দিতে হবে। পাহাড় কাটছে আবার পাহাড় হবে ইনশাল্লাহ। মানুষ গেলে মানুষ কিন্তু পাওয়া যাবে না।”

মন্ত্রী বলেন, বন বিভাগের সাড়ে পাঁচ হাজার একর জমির মধ্যে তিন হাজার একর জায়গায় রোহিঙ্গাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

“পাহাড় কেটেছে এটা আমরা স্বীকার করি, আর যেন না কাটে। পাহাড় রক্ষার জন্যই কিন্ত তাদের সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে আসছি, আর যেন এটা বিস্তৃত না হয়। এজন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাইছি। অস্থায়ীভাবে তাদের রাখার ব্যবস্থা করছি।”

এই সঙ্কট দীর্ঘমেয়াদী হলে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে মায়া বলেন, “ওই জায়গায় গাছ কাটাকাটির অবস্থা থাকবে না।”

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে মিয়ানমারের ভাষায় পড়ালেখা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

“আজ হোক আর কাল হোক তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে। যা কিছু হবে- তাদের ভাষা, কালচার, কৃষ্টি যা আছে ওই আদলেই হবে।”