শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেছেন, স্বর্ণ ও রত্ন সংগ্রহের তথ্যে অস্বচ্ছতা এবং মালিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই আপন জুয়েলার্সে এই অভিযান।
“আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, আপন জুয়েলার্স যে সোনা ও ডায়মন্ড বিক্রি করে, তা সংগ্রহের সোর্স স্বচ্ছ নয়। অভিযোগ আমলে নিয়েই এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।”
আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ বনানীতে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা। এই পরিবারের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে এই তদন্ত চালাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
এর অংশ হিসেবে রোববার বেলা ১১টার দিকে আপন জুয়েলার্সের মৌচাক, উত্তরা, জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার এবং গুলশানের দুটি বিক্রয় কেন্দ্রে একযোগে অভিযান শুরু হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখার ভ্যাট কর্মকর্তারা ছাড়াও র্যাব সদস্যরা যোগ দেন এই অভিযানে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, “শো রুমগুলোতে আমরা স্টক চেকিং করছি। দেশে তো স্বর্ণের আমদানি নেই। তারপরও তারা এগুলো কোথা থেকে কীভাবে এনেছে… বৈধ উপায়ে আনলে ভাল, না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেব।”
দিলদার আহমেদের নামে দেশে-বিদেশে যাবতীয় লেনদেনের হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে গত বৃহস্পতিবার একটি চিঠিও পাঠিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
সীমান্ত স্কয়ারে আপনের শোরুমে অভিযানে থাকা শূল্ক গোয়েন্দা বিভাগের উপ পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, “ওদের কাছে ডায়মন্ডের যে অর্নামেন্টসগুলো পেয়েছি সেগুলোর তথ্য উপাত্ত চেয়েছি। কিন্তু তারা পূর্ণাঙ্গভাবে দাখিল করতে পারেননি, সেখানে কিছুটা অস্বচ্ছতা রয়েছে। তারা যদি কাগজ দেখাতে না পারে তাহলে প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে কী পরিমাণ পণ্যের বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
“এখনই চূড়ান্ত করে বলা যাচ্ছে না। উনারা কিছু কাগজ দেখিয়েছেন, আরও কিছু দেখাবেন বলে জানিয়েছেন। তাই এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।”
দিলদারের বড় ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ ঢাকার বনানীর একটি বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে বনানী থানায় একটি মামলা হয় এক সপ্তাহ আগে। ওই মামলার অপর আসামিদের মধ্যে দুজন সাফাতের বন্ধু, বাকি দুজন তার দেহরক্ষী ও গাড়িচালক।
গত বৃহস্পতিবার সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
ধর্ষণের শিকার এক ছাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “ধর্ষণের পর সাফাত তাকে বলেছিলেন, তারা সোনা চোরাচালান করেন। দুই একটা খুন বা ধর্ষণ করে পুলিশকে টাকা দিলে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না।”