রূপনগরে অভিযানে ‘তামিমের ডানহাত’ মুরাদ নিহত

ঢাকার রূপনগরের এক বাসায় পুলিশের অভিযানে একজন নিহত হয়েছেন, যিনি নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ বলে কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2016, 03:46 PM
Updated : 3 Sept 2016, 02:30 AM

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিহতের নাম মুরাদ ওরফে মেজর মুরাদ। সে ওই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে জানতে পেরে সেখানে অভিযান চালানো হয়।”

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার পর রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ছয়তলা ওই ভবনে তারা অভিযান চালান।

এ ঘটনায় রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির ও এসআই মো. মোমেনুর রহমান আহত হন। তাদের মধ্যে শহীদ ও শাহীনের জখম গুরুতর বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মুরাদের পরিচয় জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “সে জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষক।  সংগঠনের মধ্যে মেজর মুরাদ নামে পরিচিত ছিল।”

তবে মুরাদ ছাড়াও কখনও জাহাঙ্গীর, আবার কখনও ওমর বলে এই জঙ্গি নিজের পরিচয় দিতেন বলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোখলেছুর রহমান জানান।

রূপনগরে অভিযানে গিয়ে আহত পুলিশ কর্মকর্তার এই ছবি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা।

গুলশানের ক্যাফেতে হামলার ‘হোতা’ তামিম চৌধুরী গত ২৭ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জে পুলিশি অভিযানে নিহত হওয়ার পর তদন্তে রূপনগরের এই বাসায় মুরাদের অবস্থানের বিষয়টি জানা যায় বলে পুলিশ কর্মকর্তা ছানোয়ার জানান।

তিনি বলেন, এর আগেও একদিন তারা ওই বাসায় অভিযানে যান। তবে সেদিন বাসাটি তালাবন্ধ থাকায় ফিরে আসতে হয়।

“বাড়িওয়ালাকে বলে আসি, ভাড়াটিয়া এলে পুলিশকে জানাতে। আজকে সে মালামাল আনতে বাসায় গেলে বাড়ির লোকজন বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ যায়।

“তালা খুলে বাসায় ঢুকতে গেলে সে পুলিশকে স্ট্যাব করে। পরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পালাতে গেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।”

রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এখানে জঙ্গি অবস্থান করছে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই ভবনে অভিযানে যায় রূপনগর থানা পুলিশ।

অভিযানের পর আলামত সংগ্রহে ঘটনাস্থলে যান সিআইডি সদস্যরা।

ছয়তলার একটি ফ্ল্যাটে মুরাদ থাকতেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই অভিযানের সময় যে কক্ষে মুরাদ ছিল ওই কক্ষে ঢুকতে চাইলে সে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আক্রমণ করে পালানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশ পাল্টা গুলি করলে সে মারা যায়।”

তার কাছে কী ধরনের অস্ত্র ছিল জানতে চাইলে মোখলেছুর বলেন, “তার কাছে ছুরি ও পিস্তল ছিল। দুটিই সে ব্যবহার করেছে।”

মুরাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর বলে এসবির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারি জানান।

আহত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ ও শাহীনকে সেখান থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢাকা মেডিকেলের আবাসিক চিকিৎসক জেসমিন নাহার জানান, শহীদের কোমরে এবং শাহীনের বাঁ কাধ ও মাথায় ধারাল অস্ত্রের জখম রয়েছে।

আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দুজনের জখম গুরুতর বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

“শাহীনের ডান পায়েও জখম রয়েছে, যা গুলির ক্ষত বলে মনে হচ্ছে।”

তাদের স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়ার আধা ঘণ্টা খানেক পর সেখানে গিয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন,  “ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার জখম গুরুতর। তাদের অস্ত্রোপচার চলছে।”

এরপর মধ্যরাতে এই হাসপাতালে গিয়ে দুই সহকর্মীকে দেখে মোখলেছুর রহমান বলেন, “তারা আশঙ্কামুক্ত বা আশঙ্কামুক্ত নন সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।”

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন।

এরপর সপ্তাহ না পেরোতেই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাঁহের একটি প্রবেশ পথে পুলিশি তল্লাশি চৌকিতে জঙ্গিরা হামলা চালালে নিহত হন দুই কনস্টেবল।

এই দুই হামলার পর জঙ্গি ধরতে দেশজুড়ে তল্লাশির মধ্যে ২৫ জুলাই রাতে কল্যাণপুরে একটি মেসে পুলিশের অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হয়। সেখান থেকে আহত একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভিযানের পর রূপনগরের ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ।

এরপর বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরীর নাম আসে।

আইএসের বিভিন্ন প্রকাশনার উপর ভিত্তি করে তামিমকে সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক বলা হয় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, জেএমবিকে আবার সংগঠিত করেছেন তামিম।  ‘নব্য জেএমবি’র নেতা তামিমই গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী।

তকে ধরিয়ে দিতে ২ অগাস্ট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, “তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যা পেয়েছি, এখানে মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। নিও জেএমবির নেতৃত্ব সে দিচ্ছে।

“এই তামিম চৌধুরীর পর যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।”

কল্যাণপুরে অভিযানে নিহতদের মধ্যে রায়হান কবির ওরফে তারেক জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং তিনি গুলশান হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।