সহিংসতা বাড়লেও অনিয়ম কমেছে: সিইসি

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম চার ধাপের তুলনায় পঞ্চম ধাপে সহিংসতা বাড়লেও অনিয়ম কম হয়েছে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2016, 11:07 AM
Updated : 28 May 2016, 11:07 AM

পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অনিয়মের কারণে এ পর্যন্ত ৫৩টি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে।

এবার অনিয়ম কমলেও সহিংসতা বেড়েছে মন্তব্য করে তা ঠেকাতে মানসিকতা পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করেন সিইসি।

পঞ্চম ধাপে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৭১৭ ইউপিতে ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা। নির্বাচনী সহিংসতায় এ পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, জালভোট-কারচুপি রোধের বিষয়ে উন্নতি হয়েছে; কিন্তু আগের চেয়ে সহিংসতা বেড়েছে।

“প্রথম চার ধাপের তুলনায় বেটার হয়েছে এবার। আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নিয়েছি। সারাদেশে এখন সহিংসতার আবহ বিদ্যমান। জমি-জমা নিয়ে যেমন মারামারি হয়, তেমনি নির্বাচন নিয়েও। কিন্তু নিজেরা মারামারি করে, অন্যের মাথায় বাড়ি মারে- এটা নিয়ন্ত্রণ করা তো ডিফিকাল্ট।”

কাজী রকিব বলেন, বরাবরের মতো এ পর্বেও বেশ কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটার উপস্থিতিও ছিল বেশ। কিছু জায়গায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

“সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীর শোকাহত। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।”

তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তায় অনিয়ম তুলনামূলক কম হয়েছে দাবি করে কাজী রকিব বলেন, “কেন্দ্র দখল দখল, সিল মারার ঘটনা অনেক কম হয়েছে। প্রার্থী সমর্থকদের গোলযোগে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। অনিয়মের কারণে এ পর্যন্ত ৫৩টি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। অনিয়ম পেলে আরও বন্ধ করা হবে।”

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. শাহনেওয়াজ ও ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার সকালে ভোট শুরুর আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় ঠাকুরগাঁওয়ে দুজন নির্বাচন কর্মকর্তা প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার এই খবরের পর বিভিন্ন স্থান থেকে গোলযোগের সংবাদ আসতে থাকে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ছুরিকাঘাতে এক সদস্য প্রার্থী এবং কুমিল্লার তিতাসে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিএনপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হয়েছেন। পটিয়ায় গোলযোগের মাঝে পড়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে গুলি ছুড়তে হয়। সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গোলমালের মধ্যে পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে, এছাড়া গুলিতে নিহেত হয়েছেন এক কিশোর। ব্যাপক সংঘাত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি স্থানে।

জাল ভোটের অভিযোগের মধ্যে চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের পটিয়ার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবের আহমেদকে কেন্দ্রের বাইরে ব্যালট পেপারসহ আটক করেছে বিজিবি।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে আটক করে বিজিবি। তিনি তার চেয়ারম্যান প্রার্থী ভাইয়ের জন্য প্রভাব খাটাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।   

আগের মতোই খোদ নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার উদাহরণ এবারও দেখা গেছে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ব্যালটে সিল মারার জন্য এক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নির্বাচন কমিশন আগের চার ধাপের তুলনায় শনিবারের নির্বাচনকে ‘ভালো’ বললেও বিএনপি বলছে, ভোটের নামে চলেছে ‘তামাশা’। আর অনিয়ম দেখেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ইসি।

ভোটগ্রহণ শেষে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

তার আগে দুপুরে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘তুলনামূলক ভালো’ নির্বাচন হচ্ছে।

যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে দুপুরে সিইসির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, “এটা ভোটের নামে খেলা হচ্ছে, তামাশা চলছে। সব জেনে-শুনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ইসি।

“তারা জেগে ঘুমাচ্ছে। কেউ যদি জেগে ঘুমিয়ে থাকে, করার কিছু থাকে না। এখন ইসিকে জানানোর চেষ্টাও বৃথা।”

তবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, “বিএনপি এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই ভোটে অংশ নিয়েছিল।”

দলীয় প্রতীকে প্রথম ইউপি নির্বাচনে এবার বেশিরভাগ সংঘাতই হয়েছে দল মনোনীত এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে।

ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত সাড়ে তিন মাসে সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সংঘর্ষ-হামলার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই।

দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের কারণে গোলযোগের প্রবণতাও বেড়েছে স্বীকার করে আবু হাফিজ বলেন, “মানসিকতার পরিবর্তন না হলে গোলযোগ ও অভিযোগের শেষ হবে না।”