সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সোমবার তিনি এই মন্তব্য করেন।
ফেইসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে আগে থেকে অবহিত ছিলেন না বলেও দাবি করেন তিনি।
মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টেলিফোনে বলেন, “ডাইরেক্ট সে লেখতেছে, সে মারা গেলে আমি তাকে খুন করছি, তাহলে আমি আইনের আশ্রয় নিব না? এটা কি আমি কোনো অন্যায় কাজ করছি?
“এই আইনে যদি বিচার চাই, তাহলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া আর কোনো রকম পথ খোলা আছে? কেউ যদি নালিশ করে, আমাকে এইভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছে, তারে অ্যারেস্ট করা ছাড়া কোর্টের আর কোন পথ আছে?”
এই তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্রের ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷”
এই অপরাধের দণ্ড সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা।
তথ্য প্রযুক্তি আইনের এই ধারা বাক ও চিন্তার স্বাধীনতার পরিপন্থি অভিহিত করে প্রণয়নের পর থেকেই এই আইনের বিরুদ্ধে বলে আসছেন অধিকার কর্মীরা।
প্রবীর সিকদার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো জানি না, তারে অ্যারেস্ট করছে কেন? টিভিতে দেখতেছি, তারে তথ্য প্রযুক্তি আইনে অ্যারেস্ট করছে। তথ্য প্রযুক্তিতে কী করছে? যার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, তারে অ্যারেস্ট করছে?”
প্রবীর তথ্য প্রযুক্তিতে কী করছে- প্রতিবেদকের কাছে এটা জানতে চাওয়ার পর প্রতিবেদক স্ট্যাটাসের কথা জানালে তিনি বলেন, “সেখানে আমাকে এক নম্বরে দিছে।”
“একটা মন্ত্রীরে ডাইরেক্ট অভিযোগ করতেছে, সে যদি মারা যায়, আমি তাকে খুন করব। তাহলে এই স্ট্যাটাসে পৃথিবীর এমন কোন লোক আছে, যে আইনের সাহায্য নিবে না?”
“এতে আমার পক্ষ থেকে কেউ যদি আইনের সাহায্য না চায়, তার মানে সে যেটা অভিযোগ করছে সত্যিই আমরা মাইনা নিচ্ছি। আর খোদা নাখাস্তা সে যদি হঠাৎ মারাও যায়, তাহলে আমি এক নম্বর আসামি।”
মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদককে বলেন, “তুমি হলে কী করতা? তুমি কি মাইনা নিতা যে তুমি তাকে খুন করবা? নাকি আইনের সাহায্য নিবা, আইন প্রমাণ করুক, আমি তারে মারতে চাচ্ছি।”
অন্য কোনো কারণ আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা উনাকে জিজ্ঞেস করো, উনার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলো।
“সে স্ট্যাটাস দিছে, সেটা তো আমি জানিও না। আজকে বিবিসি থেকে ফোন করলো বইলা আমি জানতে পারলাম, এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমি রাজনীতি করি, অন্তত ১০-২০ হাজার লোক আমার জন্য জান দিবার মতো লোক আছে। তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে যদি মামলা করেও থাকে, এর মধ্যে আমি জবাবদিহি করব কীভাবে?”
“বাদী কে আমি জানিও না। এখন আমি শুনছি, একজন হিন্দু লোকই বাদী হয়েছে।”
“আদালতে যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছে। যে খুনি বলতেছো, খুনি কি-না, সেই বিচার তিনি চাচ্ছেন, এর মধ্যে অন্যায়টা কী দেখলা?”
সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বাড়ি ফরিদপুরে। মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরের সংসদ সদস্য। মামলার বাদী স্বপন পাল ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা।
ফেইসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে হুমকি পাওয়ার পর নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে ঢাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন একাত্তরে শহীদের সন্তান প্রবীর সিকদার।
কিন্তু পুলিশ ওই জিডি নেয়নি জানিয়ে গত ১০ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাসে নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকির কথা জানিয়ে তার জন্য মন্ত্রী মোশাররফকে দায়ী করেন প্রবীর।
‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”
এরপর রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় আটকের পর মধ্যরাতে এই সাংবাদিককে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায়। সোমবার তাকে কারাগারে পাঠায় সেখানকার আদালত।