পর্নোর অপবাদে একঘরে, মারধর: প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশ

দিনাজপুরে এক গ্রাম্যবধূকে পর্নো ভিডিও-তে দেখা যাওয়ার অপবাদ দিয়ে তার পরিবারকে ছয় মাস একঘরে করে রাখা ও মারধরের ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধিমোর্শেদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2015, 12:27 PM
Updated : 30 August 2015, 04:27 PM

চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের গালতৈড় কাচলডাঙ্গা গ্রামে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে গত ৩ জানুয়ারি সালিশে তাদের একঘরে করে বলে জানান অপবাদের শিকার রেহানা বেগম।

এ ঘটনার জেরে ১০ জুলাই রেহানা ও তার বাবা এনামুল হককে গ্রাম্য মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিকের বাড়িতে ধরে নিয়ে লাঠিপেটাও করা হয়।

এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মারধরের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সালিশের ঘটনা জানার কথা স্বীকার করে চিরিরবন্দর থানার ওসি আনিছুর রহমান বলেন, “ভিকটিম পরিবারের পক্ষে এতদিন কোনো অভিযোগ না করায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারিনি।”

ঘটনাটি সাংবাদিকরা জানার পর ২৪ জুলাই এনামুল হক নয় জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন।

মামলার পর এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রোববার আতাব আলী নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে বলে দাবি করে পুলিশ।

তবে আতাবকে চৌকিদারকে দিয়ে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাসিবুল হাসান।

ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে অপবাদের শিকার হুসেন আলীর স্ত্রী রেহানা বেগম জানান, ২৯ ডিসেম্বর একই এলাকার রকিবুল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম পর্নো ভিডিওতে তাকে দেখার দাবি করে অশালীন প্রস্তাব দেয়।

রেহানা এর প্রতিবাদ করলে তারা ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে গ্রামের লোকজন ৩ জানুয়ারি সালিশ ডাকে। তাতে এলাকার ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন, মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিকসহ অন্যরা ওই পরিবারকে একঘরে রাখার সিদ্ধান্ত দেন।

এভাবে ছয় মাস কাটার পর এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০ জুলাই রেহেনা ফের প্রতিবাদ করলে তাকে ও তার বাবাকে ধরে মাতব্বর আবু বকরের বাড়িতে নিয়ে পেটানো হয়।

রেহেনার বাবা এনামুল জানান, জুম্মার নামাজের পর তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে পেটানোর পর বিকালে ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে এসব নিয়ে কোথাও অভিযোগ করা যাবে না মর্মে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেন।

সেসময় তাদের ফের সমাজে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

মারধরের কথা স্বীকার করে মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “তারা আমাদের গালাগালি করায় পারিবারিক বিষয়ে শাসন করেছি।

“এটা আমাদের ভাই-ভাতিজার বিষয়।”

তবে ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন বিচার বসানোর কথা অস্বীকার করলেও মারধর, একঘরে করা ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  রেহানার বাবার পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। ডাক্তার বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে তিনি জানান। 

রেহানা বিয়ের পরও স্বামী ও সন্তান নিয়ে বাবার কাছেই থাকে।