সন্দেহ হলে বস্তি, মেস, হোটেল এমনকি ক্লিনিক, কোচিং সেন্টার ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ‘ব্লক রেইড’ চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Published : 13 Aug 2023, 06:58 PM
জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে চক্রান্ত ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সবগুলো ইউনিটকে আগের তিন দিন নগরীতে ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এজন্য বস্তি, মেস, হোটেল এমনকি ক্লিনিক, কোচিং সেন্টার ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্দেহ হলে ‘ব্লক রেইড’ চালাতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘অপপ্রচার’ রোধে নজরদারি করতেও বলা হয়েছেএ গত রোববার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিতে।
১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে এ চিঠিতে ডিএমপির ইউনিটগুলোকে শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত চক্রান্তকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোর ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনা মেনে অভিযানে নামার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মতিঝিল বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান। তবে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি এবং গ্রেপ্তার নেই বলে জানান তিনি।
চিঠিতে অভিযানের জন্য ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ (সাবেক দাঙ্গা দমন বিভাগ) থেকে প্রতিটি বিভাগে অতিরিক্ত জনবল যুক্ত করা হবে। প্রতি ২৪ ঘণ্টার অভিযানের ফলাফল সকাল ৮টার মধ্যে দুটি নির্দেশিত ছকের মাধ্যমে ডিএমপির ডিসি অপরাধকেএ জানাতে বলা হয়েছে।
মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এমন নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা তো রুটিন ওয়ার্ক। এমনিতে কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই।
ডিএমপি কমিশনার স্বাক্ষরিত চিঠিটি সব অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ এবং সিটিটিসিকে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, “ঢাকা মহানগরীর অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবং ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজবের মাধ্যমে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা প্রতিরোধে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের প্রয়োজন রয়েছে। এ লক্ষ্যে কোনো সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী বা জঙ্গি যেন কোনেএআ বাসাবাড়ি, আবাসিক হোটেল, মেস, বস্তিসহ যেকোনো এলাকায় আশ্রয় বা অবস্থান নিতে না পারে সেজন্য এলাকাভিত্তিক ব্লকরেইড, তল্লাশি ও চেকপোস্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হল।
“অনলাইনে গুজব ও অপপ্রচার রোধে নজরদারির মাধ্যমে যে কোনো ধরনের চক্রান্ত ও নাশকতামূলক ষড়যন্ত্র বানচালে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ব্লক রেইড ও বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হল।“
চিঠিতে বলা হয়, বিশেষ অভিযানের সময় উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কার্যক্রম বেগবান করতে হবে।
চিঠিতে থানায় নিয়োজিত আনসারদেরও তল্লাশিই কার্যক্রমে যুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি ও থানার ওসিদের ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগ’ গ্রহণ করে এ অভিযানকে ফলপ্রসূ করতে বলা হয়।
যা বলছেন কর্মকর্তারা
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই জানিয়ে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ১৫ অগাস্টকে কেন্দ্র করে এর আগে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। সিটিটিসির কর্মকর্তারা দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে সেই জঙ্গিকে রুখতে না পারলে অনেক কিছুই হতে পারত। আমরা সেবার বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।
২০১৭ সালে ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযানে নামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা।
কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই অভিযানের এক পর্যায়ে চারতলা হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।
পুলিশের পক্ষ থেকে সেসময় বলা হয়, সাইফুল ইসলাম নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ‘সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী’ হয়েছেন।
ডিএমপির মতিঝিলের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান জানান, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনায় শনিবার থেকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, বস্তিসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্লক রিইড- বিশেষ অভিযান চলছে।
"তবে উল্লেখ করার মতো কোনো হুমকি যেমন পাওয়া যায়নি, তেমনি সে ধরনের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।"