ছুটির দিনে মেট্রোরেলে

অন্যদিনের তুলনায় ছুটির দুই দিনে মেট্রোরেলের কোচগুলোতে যাত্রীর চাপ বেশি; অধিকাংশই আসছেন পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2023, 09:33 AM
Updated : 10 Feb 2023, 09:33 AM

সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনে মেট্রোরেলে যাত্রীদের স্বাভাবিক ভিড় থাকলেও ছুটির দিনগুলোতে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

ব্যস্ত সপ্তাহ শেষে একটু বিনোদনের আশায় পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে শুক্র ও শনিবার মেট্রো ট্রেনে চড়ে বসছেন অনেকে।

দেশের প্রথম এ বৈদ্যুতিক বাহন চালুর পর প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। এখনও অনেকে আগারগাঁও কিংবা উত্তরা আসছেন মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে।

মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীরা বলছেন, অন্যদিনের তুলনায় ছুটির দুই দিনে মেট্রোরেলের কোচগুলোতে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। অনেকেই আসেন পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে। বয়স্ক বাবা-মা থেকে শুরু করে ছোট শিশুদের নিয়ে মেট্রোরেলে চড়ে ঘুরে দেখার সাধ পূরণ করেন তারা।

শুক্রবার ছুটির দিনে পুরান ঢাকার লালবাগ থেকে আগারগাঁও স্টেশনে এসেছিলেন রোকেয়া আক্তার কেয়া; সঙ্গী তার স্বামী আর ছয় বছরের ছেলে।

কাছে গিয়ে মেট্রোরেলের চড়ার প্রসঙ্গ তুলতেই জানালেন, ছুটির দিনে প্রায়ই ঢাকার আশপাশে কোথাও বেড়াতে যান। সুযোগ পেলে ঢাকার বাইরেও যান। কিন্তু মেট্রোরেল চালুর পর ইচ্ছা থাকলেও আসার সুযোগ হয়নি।

“তাই প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়তে এলাম। এখান থেকে উত্তরা গিয়ে কিছুক্ষণ থাকব। তারপর আবার চলে আসব।”

আগারগাঁও থেকে পল্লবী যাওয়ার পথে মেট্রোরেলের একটি কোচে কথা হয় প্রকৌশলী নূরের সঙ্গে। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জলি ও চার বছরের সন্তান জজবা। মা-বাবার সঙ্গে ট্রেনে চড়তে পেরে উচ্ছ্বসিত শিশুটি।

মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, সপ্তাহের অন্য দিন তেমন ভিড় চোখে না পড়লেও শুক্র ও শনিবার সকালের দিকে কিছুটা ভিড় হয়। বাকি সময়ে যে যাত্রী আসে, তা সহজেই পার করা যায়

একজন নিরাপত্তা কর্মী বললেন, “সকালে প্রধান গেইট খোলার আগে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের লাইন কিছুটা লম্বা হয়েছিল। মোট তিন ধাপে আমরা সব যাত্রীকে ভেতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তাতে হয়ত অনেকের আধা ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে।“

মেট্রোরেলের আগারগাঁও প্রান্তের কাছেই তালতলা আবাসিক এলাকা; সেখান থেকে ছুটির দিনে মেট্রোরেলে বেড়াতে এসেছেন কেউ কেউ।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা তেমনই একজন রেশমা। তিনি বলেন, “আমার কাজিনরা আমাকে ছাড়া আসবে না। এতদিন আসি আসি করে আসা হয়নি। তাই আজকে সবাই মিলে ঘুরতে আসলাম।”

শুরুর দিকে বেলা ১২টার কাছাকাছি সময়ে আগারগাঁও থেকে উত্তরা গিয়ে ফিরতি ট্রেন না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন অনেক যাত্রী। এখন সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানালেন স্টেশনের কয়েক কর্মী।

একজন নিরাপত্তা কর্মী বললেন, “আমরা এখন দুপুর ১২টা বাজার ১০ মিনিট আগে প্রধান ফটক বন্ধ করে দিচ্ছি, নতুন যাত্রী স্টেশনে ঢুকতে দিচ্ছি না। ১২টায় শেষ ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে।

“তবে শেষ ট্রেনের যাত্রীরা আগের স্টেশনে ফিরে আসতে চাইলে ১২টা ১৫ মিনিটের সময় আরেকটি কোচ ছাড়া হচ্ছে। আবার শেষ মুহূর্তে টিকেট কাটা কেউ ট্রেন মিস করলে তাদেরকে রিফান্ড দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।”

পল্লবী স্টেশনে মেহেদী নামের একজন যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, এখন যারা মেট্রোরেলে ভ্রমণ করছেন, তার বড় একটি অংশ এমআরটি পাস কিনে নিয়েছেন। এমআরটি পাস হচ্ছে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করার জন্য একটি স্থায়ী কার্ড যা বারবার রিচার্জ করা যায়।

তার কথায়, “ছুটির দিন ছাড়া অন্যদিন অফিসগামী যাত্রীরাই বেশি ভ্রমণ করছেন। মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন ও ফার্মগেইট স্টেশন চালু করা গেলে মেট্রোরেলে যাত্রীর অভাব হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মানুষের খুব উপকার হবে।“

ঢাকা শহরের চিরচেনা যানজট এড়াতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল গত ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধনের পরদিন খুলে দেয় সরকার। মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে জন্য ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেই হিসাবে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীকে গুণতে হচ্ছে ৬০ টাকা করে। বর্তমানে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু করে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলছে মেট্রো ট্রেন।