শুধু নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণই নয়, যেগুলো সংকটাপন্ন, দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়; সেগুলো শনাক্ত করে তা উদ্ধারের নির্দেশনাও দিয়েছেন রিজওয়ানা হাসান।
Published : 05 Sep 2024, 06:17 PM
দেশে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা কত, তা আগামী দুই মাসের মধ্যে নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এই কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো, বিআইডব্লিউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়।
শুধু নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণই নয়, যেগুলো সংকটাপন্ন, দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়; সেগুলো শনাক্ত করে তা উদ্ধারের নির্দেশনাও দিয়েছেন রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার রাতে ভার্চুয়ালি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পানি সম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এই নির্দেশনা দেন বলে বৃহস্পতিবার তার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে অবহিত করা হয়েছে।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশেই নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা সরকারি পর্যায়ে এখনও নির্ভুলভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবের সঙ্গে নদী কমিশনের হিসাব, আবার এই দুই সংস্থার সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মেলে না।
দখল-দূষণে অনেক নদী এখন বিলীন, যেগুলো খাতা-কলমেও আর সংরক্ষণ করা হচ্ছে না; যা নিয়ে নদী গবেষক ও নদী রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা দীর্ঘদিন কথা বলে আসছেন; সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসছে নদী নিয়ে অবহেলার নানা তথ্য।
বিজ্ঞপ্তিতে উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, যৌথভাবে তালিকা তৈরি করে তার ওপর জনমত ও আপত্তি দাখিলের সুযোগ দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। আপত্তি এলে প্রয়োজনে শুনানি করতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “৬৪ জেলায় অন্তত ৬৪টি নদী চিহ্নিত করে নদীর অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করতে আগামী ২ মাসের মধ্যে সময়ভিত্তিক, ব্যয়সাশ্রয়ী কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে এবং পরবর্তীতে সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে দখল উচ্ছেদ করবেন।”
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের পরিচালনার সভায় নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন বক্তব্য রাখেন।
'মেরে ফেলা হচ্ছে' নদীটা, দেখার কেউ নেই
৬৪ জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা ৬৩ হাজার: নদী কমিশন
আরও কথা বলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআইডাব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিভাগীয় কমিশনাররা।
সভায় পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের সবচাইতে দূষিত নদীর তালিকা প্রণয়ন করবে এবং দূষণকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান ও তদারকি করবে।
“প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর তালিকা করে দূষণ থেকে পরিত্রাণে কর্মপরিকল্পনা করবে। পরিবেশ অধিদপ্তর সকল নদীর জন্য ‘হেলথ কার্ড’ প্রস্তুত করবে, যা নদীর প্রাণ সত্ত্বার পরিচয়। অভিযান পরিচালনার পরবর্তীতে আবারও
দখল-দূষণ রোধ করতে এলাকাবাসী, তরুণ প্রজন্ম, সামাজিক সংগঠন, এনজিওদের সম্পৃক্ত করতে হবে ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিতে হবে।
অফিসে প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার পরিহার করতে নির্দেশনা দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সকল অফিসে প্লাস্টিকের পানির বোতল, প্লাস্টিকের ফোল্ডার ও প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার পরিহার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বিআইডাব্লিউটিএ ঢাকা সার্কুলার নৌপথের প্রস্তাবনার সর্বশেষ অবস্থা ও এই প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মত বিনিময় করবে।
এসব নির্দেশনার বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন উপদেষ্ট রিজওয়ানা হাসান।
সভায় বলা হয়, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশন আইনের সংশোধনের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
সভায় কীর্তনখোলা, রূপসাসহ গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলাপ্রশাসকদের প্রতি নির্দেশনা দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।