যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত: সিএনএনকে শেখ হাসিনা

“আমরা কখনোই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা কোনো সংঘর্ষকে সমর্থন করি না,” সাক্ষাৎকারে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 02:57 PM
Updated : 21 March 2023, 02:57 PM

বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা বিবেচনায় নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আমি মনে করি যে, সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এই যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।

“…ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অব্যাহত এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সিএনএনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন বলে বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়।

সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্ট যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি আমরা। কোনো বিরোধ থাকলে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

“আমরা কখনোই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা কোনো সংঘর্ষকে সমর্থন করি না।”

‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়,’ বাংলাদেশের এ পররাষ্ট্রনীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এটি অনুসরণ করছি, তাই যখন আমরা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ দেখি- আমরা অবশ্যই এর বিরোধিতা করি।”

যুদ্ধ এক পক্ষের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভূখণ্ডে (স্বাধীনভাবে) বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষার অধিকার রয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে– এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, তার দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমর্থন করে– এমন প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়ছে।

“আমরা সকলের কাছাকাছি, চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত…যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছেন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তারা বিনিয়োগ করছে এবং কিছু নির্মাণকাজ করছে- এটিই মূল কথা। আমরা কারও উপর নির্ভরশীল নই।”

চীন থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। আমরা বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠান থেকে বেশিরভাগ ঋণ নিয়ে থাকি। চীন থেকে আমাদের ঋণ খুবই কম, এটা শ্রীলঙ্কা বা অন্য কারও মত নয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, অকারণে তার সরকার কোনো ঋণ বা কোনো মেগা প্রকল্প নেয় না।

“কোনো মেগা প্রকল্প বা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করি- কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমরা সুবিধাভোগী হব।”

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন– এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, তারা যেন তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়।

“শুধু তাই নয়, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপও শুরু করেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে চীন, আসিয়ান, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সাথে কথা বলেছে এবং মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির উপর চাপ দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করেছে।

“দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমার সরকার কারও কথাই শুনছে না, এটাই সমস্যা।”

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের (এক কোটি) প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেওয়ার কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

“রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে। আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।“