সিঙ্গারা, বিরিয়ানি ও মিষ্টি দই ‘ভালোবেসে ফেলেছেন’ পিটার হাস

সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের যাত্রায় সঙ্গী থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, বলেছেন রাষ্ট্রদূত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 01:46 PM
Updated : 15 March 2023, 01:46 PM

এক বছর হল বাংলাদেশে এসেছেন পিটার হাস, ঘুরেছেন বিভিন্ন এলাকা, চেখেছেন নানা রকম খাবার। তার মধ্যে তার রসনাকে তৃপ্ত করেছে সিঙ্গারা, বিরিয়ানি আর মিষ্টি দই।

ঢাকায় দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি হওয়া ভালো লাগা এবং আগামীর প্রত্যাশার কথা এক লেখা ও ভিডিও বার্তায় বলেছেন বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

‘বিউটিফুল’ বাংলাদেশের নানা স্থান দেখার কথা তুলে ধরে এই কূটনীতিক বলেন, “আমি ঢাকার মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলো ঘুরে দেখার পাশাপাশি সুন্দরবন, রাজশাহী ও কক্সবাজারের আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখেছি।

“এই সময়ে আমার বাংলাদেশের সব বয়সি ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছে। আর আমি খাবার হিসেবে সিঙ্গারা, বিরিয়ানি ও মিষ্টি দইকে ভালোবেসে ফেলেছি!”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভাগে ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিবের দায়িত্ব থেকে ২০২২ সালের মার্চ ঢাকায় আসেন পিটার হাস। এর আগে মুম্বাইতে যুক্তরাষ্ট্র মিশনে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই পেশাদার কূটনীতিকের।

বুধবার প্রকাশিত লেখায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং ব্যবসায় পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অভিমতও তুলে ধরেন পিটার হাস।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কথা ভাবলেই আমার মনে একটা উপমা চলে আসে। আমি এমন একটি গাড়িতে চড়েছি, যেটা একটা সময়ের ধারা ধরে ছুটে চলছে। আমি যখন গাড়ির রেয়ারভিউ মিররে তাকাই, তখন আমি অবাক হই যে, বাংলাদেশ মাত্র ৫১ বছরে কতটা এগিয়েছে!

“আমি এমন একটি বাংলাদেশকে দেখতে পাই যে দেশটি স্বাধীনতা ও গর্বের সঙ্গে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উন্নীত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।”

তার চোখে ধরা পড়া বাংলাদেশের আগামী চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও বলেছেন পিটার হাস।

“আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই এখানে রয়েছে।

“সামনের রাস্তা অবশ্যই মসৃণ ও সোজা নয়। এটিতে উঁচু, নিচু, গর্ত ও বাঁক সবই আছে। অন্য প্রতিটি দেশের মতোই বাংলাদেশকেও গণতন্ত্রকে লালন করতে, শাসনব্যবস্থার উন্নতি করতে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে এবং এর জনগণকে শিক্ষিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার সময় সব দিকে নজর রেখে এগোতে হবে।”

বাংলাদেশের যাত্রাপথে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, “এই নির্বাচনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে পছন্দের কেউ নেই, তবে আমরা দেখতে চাই যে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।

“আমরা চাই, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের নিজেদের সরকার নিজেরাই নির্বাচিত করুক। গণতন্ত্র ধরে রেখে এবং ব্যক্তি অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পথ চলা আরও নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে সাহায্য করে।”

তিনি আরও বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সরকার, গণমাধ্যম থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নাগরিক সমাজ থেকে রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

“তাদের কেউ যদি নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় বা তাদের কেউ যদি অন্যকে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়, তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এছাড়াও বিক্ষোভকারী, রাজনৈতিক দলগুলো, সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ প্রত্যেকের আইনের শাসনকে সম্মান করা এবং সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।”

অর্থনৈতিক গতিধারা বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “গত ২০ বছরে দেশটিতে জাতীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই সংখ্যাটি প্রায় ৪ কোটি মানুষ, যারা দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে এসেছে; এটি এক কথায় অসাধারণ।

“আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পক্ষে অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব, যদি বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য যতটা সম্ভব আমন্ত্রণমূলক ব্যাবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে।”

বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করার জন্য দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া এবং তাদের অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া, ব্যবসায় সহায়ক একটি আইনি কাঠামো তৈরি করা, দুর্নীতির কারণে ‘গোপন খরচ’ ও অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিকতা দূর, সব ধরনের মেধা সম্পদের সুরক্ষা দেওয়া এবং মুদ্রা রূপান্তর অবাধ করার পরামর্শ দেন তিনি।

“এই ধরনের এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সংস্কার বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে,” বলেন পিটার হাস।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এবং এর জনগণ এই গাড়ি সামনের দিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং আপনারাই ঠিক করবেন যে, গাড়ি কোন দিকে কোন গতিতে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।

“যুক্তরাষ্ট্র এই যাত্রায় আপনাদের সঙ্গী ছিল এবং আগামী দিনেও আপনাদের সঙ্গে পথ চলার সঙ্গী হয়ে থাকবে। আমরা আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে যথাসাধ্য সাহায্য করব।”