‘চাদর মুড়িয়ে রাখা হচ্ছে আইসিটি ল্যাব’

অভিযোগ উঠেছে, কিছু কম্পিউটার গভর্নিং বডির সভাপতি তার বাড়ি নিয়ে গেছেন। কিছু নিয়ে গেছেন প্রধান শিক্ষক। কিছু পড়ে আছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 05:14 PM
Updated : 10 August 2022, 05:14 PM

তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব করা হলেও তার অনেকগুলো ব্যবহার না করে ‘চাদরে ‍মুড়িয়ে’ রাখা হয়েছে বলে সংসদীয় কমিটির আলোচনায় অভিযোগ উঠেছে।

কিছু ক্ষেত্রে কম্পিউটার বাড়িতে নিয়ে অফিসের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা প্রধান শিক্ষক তাদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ এসেছে।

বুধবার সংসদ ভবনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটির কয়েকজন সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটিতে আইসিটি ল্যাব অকেজো পড়ে থাকা ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার অনেকগুলোই শুরু থেকে চাদর বা টাওয়াল দিয়ে ‘মুড়িয়ে রাখা’ হয়েছে। এগুলো চালু করা হয় না।

কিছু কম্পিউটার গভর্নিং বডির সভাপতি তার বাড়ি নিয়ে গেছেন। কিছু নিয়ে গেছেন প্রধান শিক্ষক। কিছু পড়ে আছে। কাগজে-কলমে আইসিটি ল্যাব দেখানো হচ্ছে। কিন্ত বাস্তবে আইসিটি দক্ষতা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রী নেই।

কমিটির সদস্যরা জানান, সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা আইসিটি সম্পর্কে বলতে পারে কিন্তু কম্পিউটার চালু করতে বললে বা কোনো প্রোগ্রাম ওপেন করতে বললে পারে না।

মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো যথাযথ তদারকি করছে না বলেও অভিযোগ ওঠে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাবের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

“এ বিষয়ে কতজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তার তথ্যও দেওয়া হয়েছে। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় এগুলোতে সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি না সেই বিষয় এসেছে।”

বৈঠকে তোলা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে ল্যাব আছে কিন্তু প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। সেজন্য সেটা ব্যবহার হচ্ছে না।

“আলোচনায় এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে ল্যাব চালুর পর থেকেই সেটা চাদরে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে, কোনো ব্যবহার হচ্ছে না। সেটার বিষয়ে তদারকি করতে বলা হয়েছে।”

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তসহ চরটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হয়।

রুয়েটের দুর্নীতি নিয়ে ইউজিসি একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়। ওই প্রতিবেদন চাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দুর্নীতি বন্ধে করণীয় নিয়ে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি সুপারিশ পাঠানোর কথা বলা হয়।

এ বিষয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “রুয়েটের উপাচার্য দুর্নীতি করেছে সেটা তদন্ত কমিটিতে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টটি আমরা সংসদীয় কমিটিতে আনতে বলেছি।

“সেটা পর্যালোচনা করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি সুপারিশ পাঠানোর কথা বলেছি। ক্ষমতার অপব্যবারের বিষয়ে যদি আমরা আইনের আওতায় আনতে পারি। তাহলে ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা যাবে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসিত এটা ঠিক আছে। কিন্তু সংসদের তো স্বার্বভৌমত্ব আছে। সংসদ চাইলে তো এটা করতে পারে।

“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‍দুর্নীতির কারণে উচ্চশিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”

বৈঠকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়েও কথা উঠেছে।

এক সদস্য জানান,কমিটির বৈঠকে অভিযোগ উঠেছে, একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে একই ঠিকাদার বার বার কাজ পাচ্ছে। অনেকে কার্যাদেশ পাওয়ার পর কাজ শুরু করে না। শুরু করলেও কিছুদিন পর ফেলে রাখে।

“বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে। কাগজে-কলমে কাজ চলমান বলা হলেও বাস্তবে গেলে দেখা যাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। কমিটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজ দুদকের মাধ্যমে তদারকির পরামর্শ দিয়েছে।”

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন মহানগর, পৌরসভা ও জেলা পর্যায়ের স্কুল ভবনগুলোর প্রিকাস্ট পাইলিংয়ের উপর একতলা ভবন নির্মাণের কাজ কঠোর নজরদারি করাসহ নতুন ঠিকাদার তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করে।

বৈঠকে মো. আফছারুল আমীনের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আব্দুল কুদ্দুস, ফজলে হোসেন বাদশা, আব্দুস সোবহান মিয়া, এম এ মতিন এবং মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী অংশ নেন।