“যারা অসুস্থ, শুধু তারাই মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় পাচ্ছেন।”
Published : 23 Dec 2024, 12:54 PM
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
"আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন নেই। রোহিঙ্গাদের কোনো অবস্থায় প্রবেশ করতে দিব না। যারা অসুস্থ, শুধু তারাই মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় পাচ্ছেন।”
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা একজনকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করি শিগগিরই একটা ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।"
গত দেড় থেকে দুই বছরে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট।
এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।
আগের সরকারের আমলে কয়েক দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নথিপত্র চালাচালি হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ সব ভেস্তে দিয়েছে।
সীমান্তে দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গাদের আটকানো কঠিন হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাখাইনে তীব্র যুদ্ধের তীব্রতায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ চলার মধ্যে অগাস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেয়, আর কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা এখন পুরোটাই ‘আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে’।
তিনি বলেন, "আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় এজন্য বিজিবি যে তাদের সাথে কথা বলবে, এর কোন জায়গা নেই। তাদের সাথে কথা বলতে গেলে শিপে গিয়ে কথা বলতে হয় সেটাও আনঅফিসিয়াল। "
তবে সার্বিক সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে দেশটিতে।
প্রায় আট মাসেরও বেশ সময় ধরে দেশটির জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমানার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির দখলে বলে জানিয়েছে বিবিসি।