অবশেষে ঢাকায় নামল প্রার্থিত বৃষ্টি

দমকা হাওয়াসহ আসা বৃষ্টি স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দেয় নগরবাসীর মধ্যে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2023, 11:55 AM
Updated : 21 April 2023, 11:55 AM

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা নগরজীবনে অবশেষে ঝরল প্রার্থিত বৃষ্টি; টানা তাপদাহের মধ্যে বৃষ্টি এল স্বস্তি নিয়ে।

শুক্রবার বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকের এ বৃষ্টিতে ভিজল রাজধানী ঢাকা। দমকা হাওয়াসহ আসা বৃষ্টির স্থায়িত্ব খুব বেশি সময়ের না হলেও স্বস্তির পরশ রেখেছে দীর্ঘদিন পর।

বৃষ্টির সঙ্গে দখিনা ঠান্ডা হাওয়ায় তাপমাত্রা কমে স্বস্তির রেশ ছড়িয়েছে ঘরে-বাইরে সবার মাঝে।

আবহাওয়া অফিস আগের দিন আভাসের মতো শনিবারও বৃষ্টির সম্ভাবনার সুসংবাদ দিয়ে রেখেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ বলেন, "বৃষ্টির পূর্বাভাস আমাদের আগেই ছিল। আগামীকালও দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।"

টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে আগের দিন রাতে নেত্রকোনো, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে বৃষ্টি হয়। দখিনা হাওয়া বইতে শুরু করার প্রভাব দেখা গেছে শুক্রবারের তাপমাত্রাতেও।

আগের দিন যেখানে চুয়াডাঙ্গায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.৮ ডিগ্রি, তা শুক্রবার নেমে আসে ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়াবিদ হামিদ জানান, এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যশোরে ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত কয়েক দিনের গরমের তীব্র অস্বস্তির মধ্যে ঈদুল ফিতরের আগের দিন বিকাল পাঁচটার পর থেকে ঢাকা ও এর আশপাশে বৃষ্টিসহ ঝোড়াে বাতাস শুরু হলে সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

ঢাকায় যাত্রাবাড়ী, পল্টন, মতিঝিল, মগবাজার এলাকায় ঠাণ্ডা বাতাসের সঙ্গে ছোট ছোট বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু করে।

এরপর শুরু হয় মেঘের গর্জন, দমকা বাতাসে শহরের আকাশ ধূলোময় হয়ে উঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু স্থানে দেখা মেলে ভারি বর্ষণেরও।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগের দুদিন দেশের অন্যান্য স্থানে খানিকটা বৃষ্টি ঝরে। তখন থেকেই আশায় ছিলেন রাজধানীবাসী ঢাকায় কখন দেখা মিলবে বৃষ্টির, মুক্তি মিলবে গরমের তীব্রতা থেকে।

বৃহস্পতিবারের পূর্বাৃভাসে জানানো হয়েছিল, ঢাকাসহ চার বিভাগে বৃষ্টি ঝরার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই অপেক্ষাই কাটল শেষমেশ।

গুড়িগুড়ি ঝরতে শুরু করার বৃষ্টি মিনিট দশেকের মধ্যেই কোথাও কোথাও মুষলধারে আবার কোথাও থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করে। সঙ্গে ছিল বাতাসের তীব্রতা। বৃষ্টিতে গরম মুক্তির আনন্দ বোঝা যাচ্ছিল নগরবাসীর চোখেমুখে।

ঢাকার রাস্তায় বের হওয়া মানুষ এদিন হুট করে নামা এই বৃষ্টিতে ভিজেছেন ঠিকই; তবে বিরক্তির বদলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিপ্রকাশ বলছিল, এ যেন বহুদিনের প্রত্যাশিত।

তেমনই একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নুসরাত আহমেদ। গুলিস্তান মোড়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা এ শিক্ষার্থী বলেন "ভাল্লাগতেছে অনেকদিন পর টানা গরমের পর বৃষ্টি আসল। শান্তি লাগতেছে৷ এত্তদিন গরমের পর এই বৃষ্টিতে ভিজে খুবই আনন্দ লাগছে। একটু হ্যাসেল হলো কিন্তু এটা কিছুই না।"

ঈদে গ্রামের বাড়ি মেঘনায় যেতে বের হয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার শাহীন। তিনি বলেন, "একটুও কষ্ট হচ্ছে না ভিজে। একে তো বাড়ি যাচ্ছি। তার ওপর টানা গরমের পর এই বৃষ্টি। ভালই লাগছে।"

তবে হুট করে নামা এই বৃষ্টি কিছুটা ভুগিয়েছে ফুটপাতের দোকানিদের। দিনভর খটখটে রোদের মধ্যে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি এভাবে নেমে যাবে বলে প্রস্তুতি ছিল না তাদের। ফলে তাড়াহুড়ো করে পলিথিন জোগাড় করে কোনোরকম ভেজা থেকে বাঁচিয়েছেন পোশাক, জুতোসহ নানান পণ্য।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বাইরে ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করা নাদিম শেখ বলেন, "গরমের পর বৃষ্টি হইতেছে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের তো ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হইয়া গেল। ঈদ কালকে হইয়া যাইতে পারে মানুষ মাত্র জমতেছিল। এখন তো বাজার ভাইঙ্গা গেল। "