"আমরা নিজেদের মধ্যে আবার বিভাজন তৈরি করছি। এটা ছাত্রজনতার রক্তের অঙ্গীকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।"
Published : 26 Mar 2025, 11:14 AM
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকীতে বৈষম্যমুক্ত বিভাজনহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ঝরেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের কণ্ঠে।
বুধবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে একাত্তরের বীর শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠারই প্রত্যয় জানালেন তারা।
ঢাকার বাংলামটর থেকে সাড়ে চার বছরের ছেলে আব্দুর রহমান হুজাইফাকে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন আল ইমরান।
তিনি বললেন, "রাতে আলাপ করতেছিলাম সাভারে আসব। সেও বলল, আসবে। ভোর রাতে উঠে বসে আছে আমার সঙ্গে আসার জন্য।”
নতুন প্রজন্মকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই ছেলেকে স্মৃতিসৌধে নিয়ে আসার কথা জানালেন ইমরান।
“দেখুক জিনিসগুলো, তাই নিয়ে এলাম। ওকে ২৬ শে মার্চ, ২৫ শে মার্চ বিষয়গুলোও বলেছি।"
তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইপিআরের বেতারে তার এই ঘোষণা প্রচারিত হয়।
এরপর নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসামান্য ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
এবার এমন এক সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে, যখন চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের পথ ধরে তরুণ প্রজন্ম ‘বৈষম্যহীন’ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভোরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধের ফটক।
পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে সৌধ প্রাঙ্গণে। ব্যানারসহ ফুল দিতে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
এবারের স্বাধীনতা দিবসকে ‘অন্যরকম’ বলছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
তিনি বলেন, "বৈষম্যহীন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। যুদ্ধ করে আমাদের যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা আমরা কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। ছাত্র জনতার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের যেন আর নিজেদের সংশোধন করতে না হয়। অভিভাবকের এই ব্যর্থতার জায়গাটি অনুভব করতে হবে।
"আমরা নিজেদের মধ্যে আবার বিভাজন তৈরি করছি। এটা ছাত্রজনতার রক্তের অঙ্গীকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।"
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পরবর্তিত পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের চেয়ে 'সুযোগ' বেশি দেখছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিনি বলেন, "আসরা একটা নতুন সুযোগ দেখছি৷ ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের সময় এসেছে। বহুদিন পর নতুন একটা সময় এসেছে, আমাদের এটা দরকার ছিল।“