আমরাতো রোহিঙ্গাদের মারতে পারি না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

“সমাধান আমি এখনো জানি না। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, তারা তাদের জন্মভূমে ফিরে যাবে। এটা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার, তাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে,” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 11:02 AM
Updated : 26 Jan 2023, 11:02 AM

একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও ঢুকতে না দেওয়ার নীতি নিয়ে এগোলেও ‘মানবিক কারণে সরকার কঠোর হতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর বান্দরবান সীমান্তে সম্প্রতি কয়েক ডজন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা খুব জটিল সময়। আমাদের পলিসি হচ্ছে আর একটা রোহিঙ্গাকেও আমরা নেব না। কিন্তু আমরাতো ওদেরকে মারতে পারি না।”

পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছি, তোমরা তোমাদের লোকগুলো একটাও পাঠাবা না। কিন্তু তাদেরও ক্ষমতার বাইরে, কারণ ওখানে সংঘাত হচ্ছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেজন্য ভয়ে পালিয়ে আসছে।”

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন। 

মানবিক কারণে এতদিন ধরে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এলেও বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে, টেকসই ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার জন্য জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে। 

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের তৎকালীন সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও করে। 

এরপর ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। 

এর মধ্যে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তার দলের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেপ্তার করলে মিয়ানমারের সঙ্কট ঘনীভূত হয়। এর পর থেকে গণতন্ত্রপন্থি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আন্দোলন এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে সেখানে। 

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, “সমাধান আমি এখনো জানি না। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, তারা তাদের জন্মভূমে ফিরে যাবে। এটা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার, তাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে।

“এবং মিয়ানমারও বলেছে, তারা লোকগুলোকে নিয়ে যাবে। কিন্তু ৬ বছর চলছে, একটা লোকও যায় নাই। তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব। তবে, আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে কোনো সমাধান নাই।”

‘চাই ডিসিদের সহযোগিতা’

অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া ঠেকানোর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা বলেছি, অবৈধভাবে অনেক লোক বিদেশে যায় এবং এরা বড় নির্যাতনের শিকার হয়। আমরা চাই না কেউ নির্যাতনের শিকার হোক।

“অবৈধদের জন্য লোকাল এজেন্সি কাজ করে, ডিসিরা যদি বিভিন্ন মিটিংয়ে অবৈধভাবে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন, অবৈধভাবে টাকা-পয়সা দিয়ে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হবে না।”

বিদেশে নতুন নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টিতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা বলেছি, আমরা নতুন মার্কেট ওপেন করেছি। আমরা লিবিয়াতে বৈধভাবে লোক পাঠাচ্ছি, অনেক যাচ্ছে। রোমানিয়ায় ৩০ হাজার ভিসা দেয়, এগুলো যেন সহজ হয়, তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।”

মোমেন বলেন, বিদেশে অবস্থানরতদের পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতার আহ্বানও ডিসিদের জানানো হয়েছে।

“পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট ইস্যু করে না। আমরা বিদেশে পাসপোর্টের তথ্য সংগ্রহ করে থাকি। লোকালি এটা পাসপোর্ট অফিসে করে। কিন্তু ওখানে অনেক সময় দীর্ঘায়িত হয়। তার ফলে প্রবাসীদের যথেষ্ঠ অসুবিধে হয়। ডিসিরা বিষয়টা দেখভাল করলে ভালো হয়।”

প্রবাসীদের বাড়িঘর যাতে দখল না হয়, সেটা নিয়ে ডিসিদের কাজ করতে বলার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অনেক সময় প্রবাসীদের বাড়ী-ঘর বেদখল হওয়ার পর আমাদের বদনাম হয়। অনেক সময় প্রবাসী যখন তার বাড়ি উদ্ধার করতে আসে, তখন মিথ্যা কেইস দিয়ে জেলে দেওয়া হয়, এসব ব্যাপারে তারা (ডিসি) একটু সজাগ থাকলে এগুলো কমবে।”

বিদেশিদের আকর্ষণে পর্যটন এলাকার পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে ডিসিদের তাগিদ দেওয়ার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, অত্যাধুনিক নগরী বা পর্যটন নগরীতে যখন পর্যটকরা যায়, অনেক সময় সমস্যা হয়, ওখানে সিকিউরিটির সমস্যা। ওখানে লোকজন তাদের পিছে লেগে থাকে।

“আর অনেক সময় ওয়াশরুমের অভাব থাকে। ডিসি সাহেবরা ইচ্ছে করলে স্থানীয়দের নিয়ে উগ্যোগ নিতে পারেন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপও হতে পারে।”

স্থানীয়ভাবে কোনো বিশেষ উদ্যোগ যদি বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করার মত হয়, সেগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ডিসি সম্মেলন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও উপস্থিত ছিলেন।