সুনামগঞ্জে গোয়েন্দা পরিচয়ে ‘প্রতারণা’ করে লুটপাট, পল্লবীতে গ্রেপ্তার

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করার অভিযোগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2023, 03:49 PM
Updated : 23 Feb 2023, 03:49 PM

ঢাকার পল্লবী থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব বলছে, ওই ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সুনামগঞ্জে বাসাবাড়িতে লুটপাট, এমনকি নারীদের শ্লীলতাহানিও করেছেন।

ছায়া তদন্তে নেমে র‌্যাব গত বুধবার রাতে আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদকে (৩০) গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “২৫ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ সদর থানাধীন নারায়ণতলা গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অভিযানের নামে লুটপাট চালায় কিছু দুষ্কৃতিকারী। বিষয়টি জানাজানি হলে দুষ্কৃতিকারীরা কৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়।”

ওই মামলার সূত্র ধরে র‌্যাব তদন্তে নামে জানিয়ে তিনি বলেন, ছায়া তদন্তকালে র‌্যাব গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিরপুর এলাকা থেকে বিজন রায় নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যে এই ঘটনার মূল হোতা আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদ বলে জানা যায়।

পরে কৌশলে নাহিদকে ওই ঘটনার প্রায় এক মাস পর পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তার এ ব্যক্তির প্রতারণার কৌশল তুলে ধরে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে ২০০৯ সালে নাহিদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি। তবে নিজেকে ১৯৯৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী দাবি করে ওই ব্যাচের একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপ যুক্ত হন তিনি।

এ ধরনের গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নাহিদের প্রতারণার একটি কৌশল উল্লেখ করে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, “এই গ্রুপে থাকার কারণে বভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সেসব জায়গায় নিজেকে গোয়েন্দা শাখা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির টাকা, জমি ও ফ্ল্যাট উদ্ধারের নামে প্রতারণা শুরু করেন।

“এরই ধারাবাহিকতায় ওই গ্রুপের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের বিজন রায় নামের একজনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং তার আমন্ত্রণে সুনামগঞ্জে যান নাহিদ। 

সেখানে গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিজেকে একটি গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মাদকের একটি চালান ধরতে সুনামগঞ্জে গিয়েছেন বলে তাদের জানান। নাহিদ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে এ ব্যাপারে সহায়তা চান এবং বিজন রায়সহ আরও কয়েকজন তাকে সহায়তা করে।”

র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার মঈন জানান, “পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জানুয়ারি নাহিদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলীর বাড়ীসহ আশেপাশের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করে। এ সময় পরিবারের নারী সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্লীলতাহানি করে।

“তারা তল্লাশির নামে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়। পরে স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে গেলে নাহিদসহ তার সহযোগীরা সটকে পরে। এই ঘটনায় একটি মামলা হওয়ার পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত করে ঘটনার প্রায় এক মাস পর নাহিদকে গ্রেপ্তার করে।”