এ বিষয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
Published : 02 May 2024, 09:10 PM
দেড় যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর এখন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের এ প্রদর্শনশালা পরিচালনা করবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।
ইতোমধ্যে শহীদ জননীর পরিবারের তরফে জাদুঘরটিকে ‘দানমূল্যে' লিখে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় জাদুঘরের কিপার মোহাম্মদ মনিরুল হক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহীদ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় জাদুঘর পরিচালনা পর্ষদ একটি কমিটি করে দেয়। সেই কমিটি সরেজমিনে গিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে।
“পরবর্তীতে পরিচালনা পর্ষদের সভায় ‘শাখা জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় এবং মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমোদন হয়। এটি এখন জাতীয় জাদুঘরের নবম ‘শাখা জাদুঘর'।"
আগামী শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে বলে জানান জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের কিপার (চলতি দায়িত্ব) মনিরুল।
তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
এর আগেও জাতীয় জাদুঘরের ‘শাখা জাদুঘর' হিসেবে যুক্ত হয়েছে আটটি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে আছে-স্বাধীনতা জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, ওসমানী জাদুঘর, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন জাদুঘর, কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর, নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি জাদুঘর।
২০০৭ সালে পারিবারিক উদ্যোগে জাহানারা ইমাম জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার ঠিকানা- কনিকা, ৩৫৫ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সরণি (পুরনো এলিফ্যান্ট রোড)।
মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের গৌরবময় অবদান জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য তার বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়। এতদিন সপ্তাহের প্রতি শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও এখন নতুন নিয়ম পরিচালিত হবে জাদুঘরটি।
লেখক জাহানারা ইমামের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ মে। ১৯৭১ সালে নিজের বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমীকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ঢাকায় গেরিলা হামলা পরিচালনাকারী ‘ক্র্যাক প্লাটুনের’ সদস্য রুমীকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর তার সন্ধান মেলেনি। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার রুমীর বাবাও একাত্তরে মারা যান।
জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরটি স্থাপন করেন জাহানারা ইমামের ছেলে ও শহীদ রুমীর ছোট ভাই সাইফ ইমাম জামী।
জাদুঘর হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে জামী বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল শুক্রবার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের আগে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।"
কনিকা নামের বাড়িটির দোতলায় একটি বড় হল রুম ও অফিস রুম আছে। ইমাম পরিবারের নানা স্মৃতিচিহ্ন ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে সেখানে।
শহীদ রুমী ও জাহানারা ইমামের আলোকচিত্রের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন সম্মাননা, রুমীর জন্মদিনের উপহার, এয়ারগান, ব্যবহৃত তবলা, স্কুল জীবনের ছবি, নিজের মাকে নিয়ে করা নানা উক্তিও সাজানো আছে ঘরের বিভিন্ন স্থানে।
জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তারা জানান, শনিবার সকাল ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জাদুঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন।
এছাড়া জাহানারা ইমামের ছেলে সাইফ ইমাম জামী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ উপস্থিত থাকবেন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে মহাপরিচালক কামরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি' গ্রন্থ থেকে পাঠ করবেন রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, ত্রপা মজুমদার ও আপন আহসান।
স্বামী-সন্তান হারানোর বেদনা চেপে রেখে জাহানারা ইমাম একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নেমেছিলেন আন্দোলনে।
স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে ১৯৯২ সালে দলের আমির পদে বসালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত হয় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। যুদ্ধাপরাধের বিচারে তার নেতৃত্বে বসেছিল গণআদালত।
এজন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছিল জাহানারা ইমামকে। সেই অভিযোগ মাথায় নিয়েই ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
তার সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এক দশক আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়। সেই বিচারে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে যে শাহবাগ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার প্রেরণাও ছিলেন শহীদ জননী।