আট মাসে ধর্ষণের শিকার ৫৭৪ শিশু: কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম

কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলছেন, কন্যা শিশুদের যৌন নির্যাতনের একটি নতুন ধরন হচ্ছে ‘পর্নোগ্রাফি’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 01:46 PM
Updated : 30 Sept 2022, 01:46 PM

গত আট মাসে দেশে সাড়ে পাঁচশর বেশি কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে ওঠে এসেছে একটি প্রতিবেদনে।

শুক্রবার প্রেস ক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে’ এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

ওই প্রতিবেদন বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত যৌন নিপীড়নের শিকার ৫৭৪ জন কন্যাশিশুর মধ্যে ৮৪ জন দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৩ জন প্রতিবন্ধী শিশুও আছে।

দেশের ২৪টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য থেকে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। শূন্য থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশুদের নির্যাতনের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহায়তা করেছে এডুকো বাংলাদেশ।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, প্রেমে প্রতারণা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যসহ নানা কারণে ১৮১ জন শিশু এই সময়ে আত্মহত্যা করেছে।

আটজন শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনজন কন্যাশিশু অ্যাসিড সন্ত্রাস এবং ১৩৬ জন শিশু অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে।

কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম বলছে, আট মাসে গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি; এর মধ্যে দুজনকে হত্যা করা হয়, আত্মহত্যা করে একজন।

নাছিমা আক্তার জলি বলেন, জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ১৫ জন শিশুর বাল্যবিয়ের খবর প্রকাশ হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

“মাঠ পর্যায়ে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ মাসে ২৮টি জেলায় ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে, প্রতিমাসে গড়ে ২৮৮ জন।”

তিনি বলেন, এ সময় মোট ৭৬ জন শিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যাদের একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। নির্যাতনের এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাড়িতে, নিকটাত্মীয় ও গৃহকর্তার দ্বারা।

“যৌন নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ যৌন নির্যাতনের খবর খুব একটা প্রকাশ পায় না। এছাড়া কন্যা শিশুদের যৌন নির্যাতনে একটি নতুন ধরন হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ১৫ জন কন্যাশিশু,” বলেন জলি।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যাশিশুর উপর নির্যাতন একটি ব্যাধি। প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

“কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাই কন্যাশিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা যাবে না।”

এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস প্রটেকশন স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ ইউনিটের প্রধান রাজিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসি- এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব আহসানা জামান এ্যানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।