“আমাদের রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে, আমাদের কোনো পীর নেই, যিনি একটা কথা বললে সেটা অবনত মস্তিষ্কে সবাই মেনে নেবেন।”
Published : 18 Feb 2025, 08:34 PM
দেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত করতে হলে ‘জাতীয় পর্যায়ের শকুনদের চোখ’ উপড়ে ফেলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ইস্কাটনে এক সংলাপে তিনি বলেন, “পুরো বিশ্বে আমাদের অর্থনীতি বিস্তৃত করার আগে দেশের ভেতরে কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনাটা খুবই জরুরি।
“এটা না পারলে অর্থনীতি বিস্তৃত করার পথ বাধাগ্রস্ত হবে, আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না।”
‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ’ মিলনায়তনে এই সংলাপ আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি, যার শিরোনাম ছিল ‘গণ-অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: নতুন দিগন্তের সন্ধানে।’
সারজিস কথা বলেন সংলাপের তৃতীয় অধিবেশন, যার শিরোনাম ছিল 'বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতি: পররাষ্ট্রনীতিতে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা'।
তিনি বলেন, “ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ ও আয় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
“এর কারণ খুঁজতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সদস্যের খুব ছোট একটা দল মাঠপর্যায়ে আনঅফিসিয়ালি এক মাস কাজ করেছে।”
সারজিস বলেন, “সাধারণ মানুষকে কিছু চক্র জিম্মি করে ফেলছে। আমরা যদি আমাদের অর্থনীতির উত্তরণ ঘটাতে চাই, তাহলে জিম্মি হওয়া থেকেও উত্তরণ ঘটাতে হবে।”
সারজিস বলেন, “আমাদের একজন উপদেষ্টা আছেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা। এই পদে আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টাই বলেন আর বাণিজ্যমন্ত্রীই বলেন, এ জায়গাটাতে যে মানুষটা বসেন, হয় তিনি নিজে বড় ব্যবসায়ী, নয়ত তিনি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্টেকহোল্ডার।
“এই চেয়ারটায় যেসব মানুষ থাকেন, তারা দেশ বা দেশের মানুষের কথা চিন্তা না করে নিজের ও তার পরিবারের লাইফটাইম একটা অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য তৈরির চিন্তা করেন, যেটা তার পরের পাঁচ পুরুষও শেষ করতে পারবে না।”
সারজিস বলেন, “তারা এটা চিন্তা করেন না, কতটুকু বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন। তাদের কাছে দেশ বা দেশের মানুষের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বেশি প্রাধান্য পায়।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, “অনেক আমলা ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে স্পন্সর নেন, যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি নেন; কিছু নিজের পকেটে ঢোকান।”
তিনি বলেন, “ফাইনালি বিজনেস কমিউনিটি আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর থেকে সব জায়গা জিম্মি করে ফেলে। মাদার ভেসেল থেকে লাইট ভেসেলে পণ্য আসবে কিনা, সেটা এক-দুইটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে।
“আমি আমার অর্থনীতিকে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত করব, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে যেসব শকুন আছে, সেগুলোর চোখ ধীরে ধীরে উপড়ে ফেলতে হবে।”
তৃতীয় অধিবেশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুমুর রহমান খালিলি।
সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি সেলের সদস্য এস এম সুজাউদ্দিন।
তৃতীয় অধিবেশনের পর সাংবাদিকরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে জানতে চান।
উত্তরে সারজিস বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে, আমাদের ভেতরে কোনো পীর নেই, যে পীর একটা কথা বললে সেটা অবনত মস্তকে সবাই মেনে নেবে।
“বরং পলিসি মেকিংয়ের জায়গায় আমাদের মধ্যে দরকষাকষি ও মতপার্থক্য হয়। সেটা আপনারা পর্যন্ত জানতে পারেন, কারণ আমরা সে স্পেসটা দিই। এটাই আমাদের দলের গণতান্ত্রিক চেষ্টা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ।”
তিনি বলেন, “আশা করছি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল ঘোষণা হবে; হয়ত ২৪, ২৫ ও ২৬ তারিখের মধ্যেই হবে।”