“সহায়তার ব্যাপারে আলোচনায় চীন থেকে একটি কারিগরি কমিটি শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে,” বলেন জিনপিং।
Published : 10 Jul 2024, 10:54 PM
চীনে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আভাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
চীনের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’ বুধবার বিকালে বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “চীন বাংলাদেশকে চারটি উপায়ে- অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ দিয়ে সাহায্য করবে।
“বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তার জন্য কীভাবে চার ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে দুই দেশের কারিগরি কমিটি একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। এজন্য চীন থেকে একটি কারিগরি কমিটি শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে।”
বাসস জানিয়েছে, দুই নেতার বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো পরে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক হয়েছে বলে জানান তিনি।
জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রোহিঙ্গা বিষয়টি উত্থাপনের আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট সেটি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন।
জিনপিং বলেন, “আমরা মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করব।”
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ধন্যবাদও জানান তিনি।
‘বিনিয়োগে আগ্রহী’ চীন
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে জানিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহায়তা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জবাবে শি জিনপিং বলেন, “আমরা বাংলাদেশে ক্রমাগত আরও বিনিয়োগ করতে চাই।”
শেখ হাসিনা জানান, উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা। পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের মত কিছু আইকনিক অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বৈঠকে উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘অন্য মাত্রায়’ নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
শি জিনপিং বলেন, “আমরা, দুটি দেশ, আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছি। এই উদযাপন উপলক্ষে আমরা বিদ্যমান কৌশলগত সম্পর্ককে দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে যেতে চাই।”
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমানোর ওপর জোর দেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করব। চীন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করবে।…বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় চীন ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে।”
কৃষি খাতের উন্নয়নেও চীনের সহায়তা কামনা করেন শেখ হাসিনা।
জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট জানান, একটি দেশের জন্য কৃষিতে স্বাবলম্বী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশকে এ খাতে সাহায্য করার আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার ওপর জোর দেন দুই নেতা।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর চীনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সোমবার বিকালে দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং পৌঁছান শেখ হাসিনা।
চীনে এটি তার চতুর্থ সফর; এর আগে ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে দেশটিতে সফর করেন তিনি।
এবার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে চীনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এদিন সাং-গ্রি-লা সার্কেলে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
চায়নিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) চতুর্দশ জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গেও শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
মঙ্গলবার বিকালে ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনের বিপ্লবী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন।
বুধবার সকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক ও দলিল সই করেন।
বিকালে প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতে দেশের পথে রওনা হচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।