শনিবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করে সন্ধ্যায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে আন্দোলনকারীরা।
Published : 12 Jul 2024, 07:24 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও এসেছে।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে যে সংগঠনের ব্যানারে শিক্ষর্থীরা মাঠে নেমেছে তার অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “আগামীকাল শনিবার আমরা সারাদেশে জেলায় জেলায় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করব।
“এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
আগের দিন তাদের কর্মসূচিতে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগে অবস্থান নেয়।
আন্দোলনকারীরা শুরুতেই জানান, তারা বেশিক্ষণ শাহবাগ অবরোধ করবেন না। নতুন কর্মসূচি দিয়ে সন্ধ্যা ৭টার আগেই মোড়টি ত্যাগ করবেন।
আগের দিন বাংলা ব্লকেডে পুলিশের বাধার নিন্দা জানিয়ে আবু বাকের মজুমদার বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে, বিভিন্ন স্থানে হামলা করেছে। কুমিল্লায় আমাদের ভাইদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, চট্টগ্রামে লাঠিপেটা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
"আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, আন্দোলনে বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই৷ তাই অবিলম্বে আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিন।"
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে', 'হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, 'দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক' ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা তুলে দিয়ে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পর সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে, অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীরা মাঠে নেমেছিল। পরে তারা কোটা সংস্কারের দাবি সামনে নিয়ে আসে।
দাবি আদায়ে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতি দিনই বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় মানুষের চলাচলে ভোগান্তি চরমে উঠে।
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তারা। এর মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামেও সড়ক অবরোধ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। ঢাকার শাহবাগেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে কোনো হাঙ্গামা ছাড়াই ঘণ্টা চারেক সময় তারা সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এই কর্মসূচি শেষে শুক্রবার দেশের ক্যাম্পাসে সমাবেশ ও মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
একই দিন কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করা হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য অংশ প্রকাশ হয়, যাতে বলা আছে, সব কোটাই থাকতে হবে। তবে সরকার চাইলে হার পরিবর্তন করতে পারবে। আর কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে পারবে।
অবশ্য ২০১৩ সাল থেকেই কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ হচ্ছে এবং কোটা বাতিলের আগে ৬২ শতাংশ নিয়োগ মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ হয়েছে, যদিও ৪৪ শতাংশ নিয়োগ এই তালিকা থেকে হওয়ার কথা ছিল।
হাই কোর্টের এই রায়ে আপিল বিভাগ বুধবারই চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে জন প্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের বিষয়ে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ যে সমাবেশ করেছে, সেখানেও একই কথা বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের গড়ে তোলা সংগঠন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পক্ষ থেকেও একই দাবি তোলা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি হলো- ‘সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷’