টেক্কা ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ঢাকায় ডাকাতি করে গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে গা ঢাকা দিতেন।
Published : 10 Jun 2024, 05:14 PM
ছয় বছর আগে আশুলিয়ায় তুরাগ নদীতে আজহার ওরফে আজাদ নামের যে ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন ডাকাত দলের সদস্য। ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে সহযোগীরাই তাকে খুন করে লাশ ফেলে দিয়েছিল নদীতে।
ওই ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজাদের লাশ উদ্ধার করা হয় ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর।
এ ঘটনায় পিবিআই ঢাকা জেলার একটি দল গত ৯ মে গ্রেপ্তার করে ডাকাত দলটির সর্দার মজিবর আকন ওরফে টেক্কা (৪৯) এবং তার সহযোগী সামিম হেসেনকে (৩৩)। ওই হত্যার ঘটনা স্বীকার করে তারা দুজনেই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
সোমবার পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে খুনের ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন সংস্থার ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা। এসময় পিবিআই সদর দপ্তরের এসপি (সিআরও অ্যান্ড মিডিয়া) আবু ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে বড় ভাই শাজাহানের বাসা থেকে বের হন আজাদ। পরে তিনি বাসায় না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। এক পর্যায়ে আজাদের ভাই জানতে পারেন সাভারের আমিনবাজারের হিজলা এলাকায় তুরাগ নদীতে একটি লাশ ভাসছে।
১৭ ডিসেম্বর দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি নিজের ভাই আজাদের বলে শনাক্ত করেন শাহজাহান। এই ঘটনায় শাজাহান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সাভার থানায় মামলা করেন। মামলাটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই ঢাকা জেলা।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল গত ৯ মে বিকালে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন মজিবর আকন ওরফে টেক্কাকে গাজীপুরের মাজুখান বাগেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টেক্কা হত্যার ঘটনা স্বীকার এবং আরও আসামিদের বিষয়ে তথ্য দেন। তার তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিনই সামিম হোসেনকে ঢাকার শাহ আলী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, নিহত আজাদ ও গ্রেপ্তার দুজন একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। রাজধানী সংলগ্ন সাভার ও আশুলিয়ার তুরাগ নদীতে দীর্ঘদিন ধরে তারা ডাকাতি করে আসছিল।
তিনি বলেন, “আজাদকে হত্যা করা হয় ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সেই রাতে আজাদ ও গ্রেপ্তার দুই আসামিসহ ৪-৫ জন ডাকাতির জন্য একটি ট্রলার নিয়ে তুরাগ নদীর গাবতলী ঘাট থেকে আশুলিয়া রওনা দেয়। কিছুদূর যাওয়ার পরে ডাকাত সর্দার টেক্কা ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিন ওরফে লেদুর সঙ্গে আগের ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আজাদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
“বাগবিতণ্ডা এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ালে লেদু ধারাল বড় কাস্তে বা কাঁচি দিয়ে আজাহারের মাথায় পরপর তিনটি কোপ দেয়। এরপর টেক্কা তার বুকে একটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ তুরাগ নদীতে ফেলে দিয়ে চলে যায়।”
ডাকাত সর্দার টেক্কার বিরুদ্ধে নয়টি, লেদুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা কুদরত-ই-খুদা বলেন, ওই ঘটনার পর লেদু অন্য একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পেয়ে এখন কারাভোগ করছেন। আরেক আসামি সামিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডাকাত সর্দার টেক্কার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন শামীমও এই ডাকাত দলের সদস্য। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনার তালতলীর গাববাড়িয়া এলাকায়। ডাকাতি ও চাঁদাবাজির টাকায় দুই ভাই গ্রামে গড়েছেন বিশাল মাছের খামার। নিজেদের বসতভিটায় ডুপ্লেক্স ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছেন তারা।
টেক্কা ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ঢাকায় ডাকাতি করে গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে গা ঢাকা দিতেন।
তার দলটি মূলত তুরাগ নদীর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর অংশে মালবাহী ট্রলার, বালুবাহী বাল্কহেড ও অন্যান্য নৌ-যানে ডাকাতি ও চাঁবাবাজি করে আসছিল। প্রথমে তারা নৌযানগুলোর কাছে চাঁদা দাবি করে, কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাতের বেলা নোঙর করে রাখা নৌযানগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হানা দিত। ট্রলারের লোকজনকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা নগদ অর্থ, নৌযানের ব্যাটারিসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করত দলটি।