আসামিপক্ষের আবেদনে মামলাটি রায়ের পর্যায় থেকে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসেছিল।
Published : 23 Mar 2025, 03:49 PM
বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় রায়ের নতুন দিন ঠিক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের জন্য আগামী ২৭ মার্চ দিন ঠিক করেন ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ রবিউল আলম।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক রায়ের জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছিলেন। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় সেদিন রায়ের দিন পিছিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান, এর মধ্যে জি কে শামীমের মা আয়েশা আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তাকে ফের জেরার জন্য আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়।
এরপর আদালতের আদেশে মামলাটি রায়ের পর্যায় থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আসে। এরপর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের নতুন তারিখ ঠিক করে আদালত।
শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। বাদী নিজেই মামলাটি তদন্ত করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়, জি কে শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ করলেও মোট টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
এছাড়া শামীমের বাসা থেকে উদ্ধার করা নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা, শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরও ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস দুদক পায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর দুদকে এই তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদন পাওয়ার পর পরের বছরের ১৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর শামীম ও তার মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে জি কে শামীমের উত্থান হয়। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটি তা অস্বীকার করে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের বাসা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভবন থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।
গ্রেপ্তারের সময় র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়। জব্দ করা হয় তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব।
শামীমের বিরুদ্ধে মাদক, অর্থ পাচার ও অস্ত্র আইনেও তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় ২০২২ সালে শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। পরের বছর অর্থপাচার মামলায় শামীমের ১০ বছর এবং তার সাত দেহরক্ষীর ৪ বছর করে কারাদণ্ড হয়।