“যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানানো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অধিকারের মত নাগরিক স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা,” চিঠিতে বলেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
Published : 03 Aug 2024, 05:33 PM
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে জোরালো পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ২২ জন সেনেটর ও কংগ্রেসম্যান।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর এডওয়ার্ড জে মার্কির নেতৃত্বে পাঠানো এক চিঠিতে সাতজন সেনেটের এবং ১৫ জন কংগ্রেস সদস্য এ আহ্বান জানান।
চিঠিতে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পাশাপাশি নির্বাচনের আগে-পরে বিভিন্ন ঘটনা, র্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও শ্রম অধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় টেনেছেন।
চিঠির শুরুতে বলা হয়, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ নিয়ে এবং বাংলাদেশি জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়ে আমরা চিঠিটি লিখছি।
“বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ফলে আমাদের উদ্বেগ আরও জোরালো হয়েছে এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ‘অবাধ বা নিরপেক্ষ না’ হওয়ার সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা সঠিকভাবেই করেছে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা প্রসঙ্গে সেনেটররা লিখেন, “ঢাকা ও দেশের অন্যান্য শহরে পুলিশ, বিক্ষোভকারী, বিরোধীদলীয় কর্মী ও সরকারদলীয় সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৭০ জনের প্রাণ গেছে। হাজারো মানুষ আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছে।
“বিক্ষোভের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার এর আগে (মার্কিন) নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করেছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। কঠোর সামরিক কারফিউ জারি করেছে এবং ‘দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ’ দিয়েছে। দেশজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করেছে।
“চলমান এই পরিস্থিতিতে আমরা আশা করি বাংলাদেশের সঙ্গে গণতান্ত্রিক নীতি ও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রক্ষায় আপনি (অ্যান্টনি ব্লিনকেন) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেবেন।”
মার্কিন আইনপ্রণেতারা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানানো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অধিকারের মত নাগরিক স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে উল্লিখিত নিপীড়নের জন্য দায়ী সরকারি কর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
“পাশাপাশি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতি ঠেকানোর জন্য প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার পাওয়ার বিষয়ে, বাংলাদেশি জনগণকে সমর্থন করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে, যে সরকার মানবাধিকার রক্ষা করবে এবং ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সম্মান দেখাবে।”
চিঠিতে সই করেছেন- মার্কিন সেনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন, ডিক ডারবিন, টিম কেইন, ট্যামি বাল্ডউইন, জেফ মার্কলে, ক্রিস মারফি এবং কংগ্রেস সদস্য সেথ মুল্টন, লরি ট্রাহান, জো উইলসন, ডিনা টিটাস, গ্রেস মেং, গ্যারি কনোলি, গ্যাবি অ্যামো, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ, ইলহান ওমর, নাডিয়া ভেল জিকুয়েজ, ড্যান কিলডি, বারবারা লি ও জেমস ময়লান।
চাকরিতে কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের পরিপত্র হাই কোর্টে বাতিল হলে গেল জুলাই মাস থেকে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতা চলে। বিশেষ করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর এলাকায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সংঘর্ষের মধ্যে বন্ধ হয় মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকে ফেইসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
সহিংসতায় সরকারের পক্ষ থেকে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে, আহত কয়েছে আরও কয়েকশ মানুষ। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দুই শতাধিক মানুষের নিহতের খবর এসেছে।
সংঘর্ষ থামার পর পুলিশ ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার অভিযানে নামার কথা জানায়, কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ, হত্যার বিচারসহ নানা দাবি জানানো হতে থাকে। দফায় দফায় আসছে কর্মসূচিও।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মৃত্যুর তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলেছেন একাধিক বক্তব্যে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে নারাজ আন্দোলনকারীরা।
সবশেষ শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগের কর্মসূচি ঘোষণা রয়েছে।